রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • সাবেক ৮ মন্ত্রীসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া টেকসই বিনিয়োগ সম্ভব নয়: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম ম্যাচেই বাধা প্রকৃতি, বৃষ্টি শঙ্কায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ ৪০ বছরের রপ্তানি খাতে নজিরবিহীন সংকট দেখিনি: এ. কে. আজাদ যুক্তরাজ্যে সম্পদ বিক্রি করছেন কিছু রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য গোপালগঞ্জে পরিস্থিতির কারণে গুলি করেছে সেনাবাহিনী: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পানিশূন্য হতে চলেছে কাবুল, ইতিহাসে নজিরবিহীন শঙ্কা যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ হস্তান্তর করছেন হাসিনা ঘনিষ্ঠরা শেখ হাসিনা জাতির কলঙ্ক, তাকে ক্ষমা নয়: মির্জা ফখরুল ২৮তম বিসিএসের ডিসি মাসুদের নতুন দায়িত্বে চমক
  • এনবিআরের আন্দোলন: সংগঠনহীন চেতনার দায় কার?

    এনবিআরের আন্দোলন: সংগঠনহীন চেতনার দায় কার?
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘মেরুদণ্ড’ হিসেবেই বিবেচিত। দেশীয় রাজস্বের একটি বড় অংশ এই সংস্থার ওপর নির্ভরশীল। অথচ সেই সংস্থার ভেতরে গত কয়েক মাস ধরে চলমান আন্দোলন, কর্মবিরতি ও অস্থিরতার যে চিত্র আমরা দেখছি, তা শুধু উদ্বেগজনক নয়, বরং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক নৈতিকতার ওপরও বড় প্রশ্নচিহ্ন টানছে।

    এনবিআর বিলুপ্ত করার গুঞ্জনের বিরুদ্ধে প্রথমে মে মাসে এবং পরে জুনে দুই দফায় ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। কাস্টমস হাউস ও বন্দর বন্ধ রেখে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হয়। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই দাবি করেছিলেন, এটি রাজস্ব আদায় কাঠামোর যৌক্তিক সংস্কার এবং এনবিআরের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় যখন সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়; বদলি, বাধ্যতামূলক অবসর, বহিষ্কার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান।

    এই পরিণতির মুখোমুখি হয়ে আজ এনবিআরের অনেক কর্মকর্তা নিজেদের ভুল উপলব্ধি করছেন। কারও মুখে ‘গণক্ষমা’ চাওয়ার ইঙ্গিত, কেউবা সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে এই আন্দোলন ছিল নেতৃত্বহীন, কৌশলহীন এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও পরিণতির হিসাব না করেই পরিচালিত এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।

    যে কোনো আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, লক্ষ্য ও কৌশল সুপরিকল্পিত হতে হয়। কিন্তু এনবিআরের আন্দোলনে সেই দূরদৃষ্টি ও ঐক্য অনুপস্থিত ছিল। একজন দুইজন মুখপাত্র থাকলেও আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো, ধারাবাহিকতা বা কৌশলগত প্রজ্ঞা চোখে পড়েনি। বরং মুখচেনা কর্মকর্তারা নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলেই ধারণা জন্মেছে।

    এ আন্দোলনের একটি বড় ব্যর্থতা হলো, সরকারি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকেই সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ, তার গ্রহণযোগ্যতা ও আইনগত সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়নি। এর ফলে সরকার আইনগত কাঠামোর মধ্যে থেকে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে একটুও দেরি করেনি।

    দুদক এখন পর্যন্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে, যার মধ্যে অধিকাংশই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। সরকারপক্ষ বলছে, এটি নিয়মিত তদন্তের অংশ। কিন্তু সমালোচকদের প্রশ্ন এতদিন এসব দুর্নীতির তদন্ত হয়নি কেন? আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পরই কেন এই পদক্ষেপ?

    দুদকের দায়িত্ব অবশ্যই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। তবে তা যেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। অন্যদিকে এনবিআর কর্মকর্তারাও যদি সত্যিই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হয়ে থাকেন, তবে আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তারা নিজেদেরই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন।

    বর্তমানে যেসব কর্মকর্তা গণক্ষমা চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তারা হয়তো বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই উপলব্ধি কেন আন্দোলনের আগে হয়নি? নিজেদের ক্যারিয়ার, দেশীয় রাজস্ব ও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে ভাবনার ঘাটতি কী এককভাবে তাদের? না, এই দায় বহন করতে হবে প্রশাসনের, সরকারের সংশ্লিষ্ট অংশ, এমনকি শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকাহীনতা এবং রাজনৈতিক অভিভাবকত্বের অভাবকেও।

    এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনিক সংস্কৃতির জন্য বড় শিক্ষা।
    ১. সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার দরকার হলেও তা হওয়া উচিত সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও আলোচনার মাধ্যমে।
    ২. আন্দোলন করার আগে কর্মকর্তাদের উচিত আইনগত কাঠামো, চাকরির বিধি ও জনস্বার্থ, এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
    ৩. সরকারের পক্ষ থেকেও ‘জনস্বার্থে অবসর’ বা হঠাৎ বদলির মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে অভিযোগের জায়গা না থাকে।

    আন্দোলন কখনোই একমাত্র সমাধান নয়, বিশেষত তা যখন রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের ভেতর থেকে পরিচালিত হয়। এনবিআর আন্দোলনের পরিণতি সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে, দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, নেতৃত্বহীন প্রবণতা এবং দুর্বল সাংগঠনিক পরিকল্পনা কেবল ব্যক্তিগত বিপর্যয়ই নয়, একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকেও গভীর সংকটে ফেলতে পারে।

    এখন প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, স্বচ্ছ তদন্ত এবং ভবিষ্যতে এমন ভুল না করার শিক্ষা গ্রহণ। একইসঙ্গে সরকারি সংস্কার প্রক্রিয়া যেন সুশাসন ও ন্যায়ের আলোকে পরিচালিত হয়, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    A PHP Error was encountered

    Severity: Core Warning

    Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'tidy.so' (tried: /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so (libtidy.so.5: cannot open shared object file: No such file or directory), /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so (/opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory))

    Filename: Unknown

    Line Number: 0

    Backtrace: