টানা চতুর্থ ম্যাচে জোড়া গোল, ইতিহাস গড়লেন মেসি


নিশ্চিতভাবেই লিওনেল মেসি মায়ামির জার্সিতে যেন আবারও লিখছেন ফুটবল কিংবদন্তির নতুন অধ্যায়। বুধবার রাতে নিউ ইংল্যান্ড রেভল্যুশনের মাঠে ইন্টার মায়ামির ২-১ ব্যবধানে জয়ে জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক হয়ে উঠলেন আর্জেন্টাইন তারকা। কেবল দলকে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দেননি, বরং মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) গড়েছেন এক নতুন ইতিহাস—টানা চার ম্যাচে একাধিক গোল করার নজির, যা আগে কোনো খেলোয়াড়ের ছিল না।
ম্যাসাচুসেটসের আলো ঝলমলে স্টেডিয়ামে মেসি যেন ছিলেন অনন্য এক ঝলক। শুরু থেকেই দাপট, নিখুঁত পাস আর দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ছড়িয়েছেন আতঙ্ক। বয়স যে শুধুই একটি সংখ্যা, সেটা আরও একবার প্রমাণ করলেন এই বিশ্বকাপজয়ী। ৩৮ বছর বয়সেও তার খেলায় ছিল সেই পুরোনো বার্সেলোনা দিনের ছাপ—দ্রুত গতি, অসাধারণ বল নিয়ন্ত্রণ আর গোলে চোখ রাখা এক অদম্য মানসিকতা।
মেসির এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে শুধু ইন্টার মায়ামিই নয়, এমএলএস-ও যেন পেয়েছে নতুন প্রাণ।
মেজর লিগ সকারে যেন নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করছেন লিওনেল মেসি। নিউ ইংল্যান্ড রেভল্যুশনের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামির ২-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচেও ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ম্যাচের ২৭তম মিনিটে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ট্যানার বিসনের ভুল পাস ধরে বল পেয়ে যান মেসি। এরপর ডান দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়ে কোনাকুনি এক শটে বল জালে জড়ান, দলকে এগিয়ে দেন ১-০ ব্যবধানে।
মাত্র ১০ মিনিট পরই ফের গোল উৎসবে যোগ দেন তিনি। এবার সার্জিও বুসকেটসের অসাধারণ এক থ্রু পাস পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে নিচু শটে বল পাঠান নিউ ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক ইভাচিচের বাঁ পাশ দিয়ে। ম্যাচের প্রথমার্ধেই স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২-০, আর কার্যত নিশ্চিত হয় ইন্টার মায়ামির জয় এবং মেসির অনন্য এক রেকর্ড।
এই ম্যাচে জোড়া গোল করে মেসি গড়েছেন ইতিহাস—মেজর লিগ সকারে তিনিই প্রথম খেলোয়াড়, যিনি টানা চারটি লিগ ম্যাচে একাধিক গোল করেছেন।
তার এই ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স এসেছে নিচের চার ম্যাচে:
২৮ মে: মন্ট্রিয়ালের বিপক্ষে ৪-২ জয়
৩১ মে: কলাম্বাস ক্রুর বিপক্ষে ৫-১ জয়
৫ জুলাই: মন্ট্রিয়াল (অ্যাওয়ে) ৪-১ জয়
৯ জুলাই: নিউ ইংল্যান্ড (অ্যাওয়ে) ২-১ জয়
এই চার ম্যাচে মেসির গোল সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮। এর আগে ফিলাডেলফিয়ার বিপক্ষে ৩-৩ ড্র ম্যাচেও গোল পেয়েছিলেন তিনি। শুধু এমএলএস নয়, ক্লাব বিশ্বকাপেও পোর্তোর বিপক্ষে করেছিলেন জয়সূচক গোল, যদিও মায়ামির অভিযান থেমে যায় শেষ ষোলোতেই।
এই অসাধারণ ধারাবাহিকতায় ইন্টার মায়ামি উঠে এসেছে ইস্টার্ন কনফারেন্সের পঞ্চম স্থানে, যা প্লে-অফের দৌড়ে বড় সুবিধা।
মেসির এমন ফর্ম দেখে বয়স যেন শুধুই একটা সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩৮ বছর বয়সেও বল পায়ে তাঁর ছন্দ, গতি আর গোলের ক্ষুধা যেন আগের চেয়ে আরও তীব্র। গত বছর ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তিনি যেন আবার ফিরেছেন নিজের সেরা ছন্দে।
ম্যাচ শেষে ইন্টার মায়ামির কোচ হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানো বলেছেন,
"মেসি শুধু গোল করছে না, পুরো দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। ওর উপস্থিতি তরুণদের আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে, আর দলকে জয়ের মানসিকতায় গড়ে তুলছে।"
প্রতি ম্যাচে মাঠে নেমে শুধু গোল নয়, যেন ইতিহাস লিখতেই নামেন লিওনেল মেসি। নিউ ইংল্যান্ডের মাঠেও সে ইতিহাসে যোগ হলো আরেকটি রঙিন অধ্যায়।
আর সেই চিরচেনা প্রশ্ন আবার ফিরে আসে—এত বয়সেও এতটা ধারালো থাকার রহস্য কী?
উত্তরটা সহজ: কারণ তিনি লিওনেল মেসি।
