বিএনপিকে ঘিরে বিতর্কের বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ


বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির নেতৃত্ব, বিশেষ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঘিরে যেসব স্লোগান ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে বহুস্তরীয় রাজনৈতিক হিসাব, বহুমুখী ষড়যন্ত্র, এবং একটি বৃহৎ জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করে দেওয়ার সুপরিকল্পিত প্রয়াস।
তবে প্রশ্ন হলো, এই ঘটনার মূল্যায়ন কোন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হবে? ষড়যন্ত্রের বাস্তবতা সামনে রেখে, নাকি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মবিশ্লেষণের সাহস নিয়ে?
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যেসব স্লোগান উঠেছে, তাতে জড়িত ইসলামপন্থি কিছু গোষ্ঠী ও সাবেক শরিক দল, একাংশ অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থী এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষুব্ধ কিছু অংশ। বিএনপির নেতাদের ভাষ্যমতে, এটি একটি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল, অস্থিরতা সৃষ্টি এবং জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নতজানু করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট করে বলেছেন, এই অপপ্রচার এবং উসকানি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি গণজাগরণ ঠেকাতে সংঘবদ্ধ এক অপকৌশলেরই অংশ।
দলের ভেতর যেসব নেতাকর্মী স্থানীয়ভাবে অপকর্মে জড়িত, বিএনপি তাদের প্রতি নরম নয়। বরং নেতৃত্ব থেকে শুরু করে অঙ্গসংগঠনের নেতারাও বলছেন, যারা অপরাধে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে দলের ভাবমূর্তির ওপর এই অভিযোগের ছায়া কতটা পড়েছে, সেটিও অস্বীকার করা চলে না।
যেখানে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে শুধু বিএনপির উপর দায় চাপিয়ে আসল দোষীদের আড়াল করা হচ্ছে এমন মতও উঠে এসেছে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে।
তারেক রহমান বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করলেও দলের প্রত্যন্ত তৃণমূল পর্যন্ত তার নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা এখনও দৃঢ়। তাকে ঘিরে উঠা স্লোগান মূলত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চক্রান্তের অংশ এমনটাই বলছেন বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা উল্লেখ করেছেন, তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করার জন্যই এই গণমাধ্যম নির্ভর অপপ্রচার। তারা এটিকে আবেগের জায়গায় আঘাত হিসেবে দেখছেন এবং পাল্টা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির মতে, দলটি বারবার মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হচ্ছে। জনবিচ্ছিন্ন একটি সরকার ও তাদের মিত্ররা বিএনপির জনপ্রিয়তা ও সংগঠিত রাজপথ রাজনীতিকে ভয় পাচ্ছে বলেই এমন কৌশল নিয়েছে।
তবে এই সংকটকেই বিএনপি রাজনৈতিক সচেতনতা ও গণঐক্য গঠনের সুযোগ হিসেবে দেখছে। অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান। এই রূপরেখাই হতে পারে বিএনপির আগামীদিনের চালিকাশক্তি।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত স্লোগান এবং অভিযোগ একদিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে আত্মসমালোচনার সুযোগ। বিএনপি যদি চায় সত্যিকার গণজাগরণ, তাহলে এই মুহূর্তে আত্মবিশ্লেষণ ও জনসম্পৃক্ততার পথেই তাকে এগোতে হবে।
রাজনীতি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, বরং জনগণের পক্ষে কাজ করার জায়গা। বিএনপি সেই মূলনীতিতে যদি অটল থাকে, তাহলে এই সংকটই তাদের জন্য হয়ে উঠতে পারে পুনর্জাগরণের শুরু।
