রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • শেখ হাসিনাসহ ১০০ জনের দুর্নীতির ৬ মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত মিরপুরে টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ফিফার টিকিট ঘোষণা: ২০২৬ বিশ্বকাপ ঘিরে প্রস্তুতি শুরু প্রশাসনে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে: নাহিদ ইসলাম সাবেক ৮ মন্ত্রীসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া টেকসই বিনিয়োগ সম্ভব নয়: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম ম্যাচেই বাধা প্রকৃতি, বৃষ্টি শঙ্কায় বাংলাদেশ-পাকিস্তান সিরিজ ৪০ বছরের রপ্তানি খাতে নজিরবিহীন সংকট দেখিনি: এ. কে. আজাদ যুক্তরাজ্যে সম্পদ বিক্রি করছেন কিছু রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য
  • মেঘের চাদরে মোড়া চন্দ্রগিরি

    মেঘের চাদরে মোড়া চন্দ্রগিরি
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    ঘড়ির কাঁটায় নেপালে সময় সকাল সাতটা। মোবাইলের অ্যালার্ম জানান দিচ্ছে এবার ঘুম থেকে উঠতে হবে।

    কিন্তু এতো ঠান্ডা রুমে হিটারের সঙ্গে দুটো লেপ গায়ে দেবার পরেও ঠান্ডা কমছিল না। আড় চোখে মোবাইলে নেপালের বর্তমান তাপমাত্রা দেখে চোখ মাথায় ওঠার জোগাড়!

    থামেলের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস! ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও  লেপের নিচ থেকে উঠতে মন চাইছিল না। কিছু সময় পর আবার অভিনব দাদার ফোন। আর ঘুমিও না, এবার উঠে তৈরি হয়ে নাও। আজ আমার আর সানন্দার নেপাল ভ্রমণের তৃতীয় দিন। হিমালয়কন্যা নেপালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ বিশ্ববাসী। এজন্যই দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা নেপাল ভ্রমণে গিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও মাউন্ট এভারেস্ট, শত বছরের পুরনো মন্দির, আকাশচুম্বী পর্বতমালা, জলপ্রপাত, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, বিভিন্ন উৎসব রয়েছে দেশটিতে। 

    পৃথিবীর যেসব দেশে সহজেই একা ভ্রমণ করা যায়, তার মধ্যে নেপাল অন্যতম। বিশ্বের পর্বতারোহীদের পছন্দের স্থান নেপাল। অন্নপূর্ণা কিংবা এভারেস্ট জয়ের জন্য সারা বছরই তারা এখানে ভিড় করেন। নেপাল পর্বতারোহীদের পছন্দের দেশ হলেও সাধারণ পর্যটকরাও এখানে যান হিমালয়ের পাশ থেকে সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে। অন্নপূর্ণা পর্বতের শুভ্রচূড়া দেখতেও কেউ কেউ ভিড় করেন সেখানে। প্রত্যেক বছর হাজারো পর্যটক ভ্রমণ করেন এই পাহাড়ি কন্যার দেশে। সার্কের সদস্যদের মধ্যে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর একটি হলো নেপাল, যার কোনো সমুদ্র নেই, সমুদ্র পথে যবার সুযোগও নেই। 

    কাঠমান্ডু নেপালের রাজধানী ও বৃহত্তম মহানগর যেখানে বাস করছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ। নেপালে ঘুরতে হলে কাঠমান্ডুতে আসাই ভালো। অনেকেই পাহাড় দেখবার আশায় কাঠমান্ডুর মতো শহরকে ঘুরবার তালিকায় প্রাধান্য প্রথমে দিতে চান না কিন্তু ঐতিহ্য, বাণিজ্য, নানাবিধ আরকিটেকচারাল নিদর্শন নিয়ে কাঠমান্ডু কিন্তু তার আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। 

    নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে নিলাম নতুন গন্তব্যে যাবার জন্য। আমাদের আজকের ভ্রমণ গন্তব্য চন্দ্রগিরি হিল। ঢাকার মতো যানজট আছে, রাস্তার হাল আরও খারাপ কাঠমান্ডুর। দিনভর বেশ তাপ। তবে শেষরাতে গা কিছুটা শিনশিন করে। সূর্যদেবের ছোঁয়ায় উঁচুনিচু পথ পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। দূরের পাহাড় চূড়ায় সাদা বরফের আনাগোনা আমাদের মুগ্ধ করছিল! চলতি পথে আমাদের ঢাকা শহরের মতো যানজটে মন অতিষ্ঠ হবার জোগাড়। সকালে ঠান্ডার প্রকোপ দেখে মোকাবেলার লক্ষে কয়েকটি কাপড় পরেছি বৈকি কিন্তু এবার ঘেমে উঠছি বারবার। তখনই অভিনব দাদা বললেন, ‘একটু অপেক্ষা করো। ঠান্ডায় কাঁপবে।’ 

    কাঠমান্ডু শহর থেকে দেড় ঘণ্টার পথ চন্দ্রগিরি। সেখানেই এত শীত হবে! ঠিক বিশ্বাস হলো না। মেঘেদের দেশে এসে অনেকের আবদার ছিল মেঘ ছোঁয়ার। স্বল্প সময়ে এভারেস্টের কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই সেই মেঘের ছোঁয়া পেতে অভিনবদার আমাদের নিয়ে চন্দ্রগিরি যাবার প্রয়াস। আমার ভ্রমণসঙ্গী সানন্দা আগে থেকেই চন্দ্রগিরি হিলের ট্র্যাভেল ব্লগ দেখিয়েছিল। কিন্তু উচ্চতাভীতি আছে আমার, তাই যাব না বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ভ্রমণসঙ্গীর জোরাজুরিতে যেতে হলো। 

    সবাই মিলে চন্দ্রগিরির পথ ধরলাম। কাঠমান্ডু মূলত একটি উপত্যকা। এর চারপাশ ঘিরে আছে পাহাড়। প্রায় দুই ঘণ্টা মাইক্রোবাসে চেপে নামলাম থানকোট। সেখান থেকে শুরু হলো পাহাড়ি পথ। এরপর পাহাড় কেটে তৈরি শক্ত কংক্রিটের সুদৃশ্য পথ এঁকেবেঁকে গিয়ে থামল চন্দ্রগিরি কেবল কার স্টেশনে। বিশাল এই এলাকা থেকে নিচের থানকোট শহর স্পষ্ট। একটি পাহাড় ডিঙিয়ে কাঠমান্ডু। সেটা খুব একটা স্পষ্ট না। কিন্তু চন্দ্রগিরিতে এসে রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেছি! সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় সাড়ে আট হাজার ফুট। কাঁপুনি তো ধরবেই। এত উঁচু পাহাড়ে উঠে আসার পথটাও রোমাঞ্চকর। সময় দিবা দ্বিতীয় প্রহর আমরা এসে পৌঁছালাম চন্দ্রগিরির প্রবেশ পথে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে পদব্রজে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হিমশীতল বাতাসে একটু পরপর শরীর কেঁপে উঠছিল।

    আমাদের মতো অনেকেই এসেছেন চন্দ্রগিরি দর্শনে। দেখা পেলাম দর্শনীয় ফোয়ারার। আমরা এগিয়ে যেতে লাগলাম কেবল কারের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে উঁচু একটি ভবনে উঠে কেবল কারের মূল স্টেশনে পৌঁছালাম। এর আগে টিকিট কাটতে হলো। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের মাথাপিছু টিকিট ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। ভবনের ভেতরে প্রবেশের পর সহস্রাধিক মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখতে পেলাম। আমরা  লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। অভিনব দাদা বললেন সম্ভবত চন্দ্রগিরি হিলের পৌরাণিক তাৎপর্য বিবেচনা করে নেপাল সরকার চন্দ্রগিরি দর্শনে কেবল কার নির্মাণ করেন। চন্দ্রগিরির উচ্চতা ৮২৬৮ ফিট। পৌরাণিক যুগে এই উচ্চতা কীভাবে পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের মাথায় ভালেশ্বর মন্দির গড়ে উঠেছিল, সে তথ্য অজ্ঞাত। যেমন অজ্ঞাত মিশরের সুউচ্চ পিরামিডগুলোয় বিশাল বিশাল পাথর স্থাপন। 

    সে যাই হোক, কেবল কারের যাত্রা মোটামুটি ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। পাহাড়ের উচ্চতায় যেতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট, সেটি আবার নির্ভর করে বাতাসের গতির ওপর। কেবল কার থেকে কাঠমান্ডু উপত্যকা, প্রকৃতিক দৃশ্য ও অন্নপূর্ণা থেকে এভারেস্ট পর্যন্ত হিমালয় পর্বতমালার চমৎকার দৃশ্য অবলোকন করা যায়। কেবলওয়ে সিস্টেমে ৩৪টি গন্ডোলা রয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ১০০০ যাত্রী বহনে সক্ষম। 

    দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর আমরা উঠে বসলাম কেবল কারে। কারের দুই পাশে মুখোমুখি আমরা মোট ছয়জন বসে আছি। যারা নিচের দৃশ্য দেখতে চান না, তারা উল্টো দিকে বসলেন। সরসর করে উঠছে কেবল কার। যত ওপরে উঠছি, নিচে শহর তত ছোট হয়ে যাচ্ছে। নিচে ঘন সবুজ বন কালচে হচ্ছে। খানিকটা উঠেছি, এরই মধ্যে কোত্থেকে এক দল মেঘ এসে লাগল কারে, গায়ে। ভিজিয়ে দিয়ে গেল গ্লাস। মেঘের ছোঁয়ায় বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে আছে সেখানে। আমাদের গায়ে লাগল হিমেল পরশ। একটু ঠান্ডা লাগছে। আমি নিচের দিকে তাকাতেই পিলে চমকে উঠলো। আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। অন্যদিকে কেবল কারের যাত্রীদের মধ্যে এখন শুধু ‘ওয়াহ’ ‘কী সুন্দর’ ‘বাহ’ ধ্বনি! মাঝেমধ্যে একটি দুটি কার চলে যাচ্ছে পাশ দিয়ে। কিছু দূর উঠে নিচে শুধু মেঘের খেলা চোখে পড়ল। এখন বনও অদৃশ্য। কালচে মেঘের চাদর ঢেকে দিয়েছে সবুজ। ঠান্ডা আরও বাড়ছে। মেঘের খেলা দেখতে দেখতে, ভয়মিশ্রিত তীব্র ভালো লাগায় ভাসতে ভাসতে, অনেক ভাসা মেঘের পরশ গায়ে মেখে তারের ওপর দিয়ে চলা আমাদের ছোট গাড়িটি গিয়ে থামল চন্দ্রগিরি স্টেশনে। আড়াই কিলোমিটারের কেবল কার ভ্রমণ শেষ হলো। 

    আমরা কেবল কার থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। চারপাশের শীতল বন্য ফুলের সুবাসিত স্নিগ্ধ বাতাসে মন প্রফুল্ল হবে যে কারো। এ যেন চারদিকের দূষিত জঞ্জাল যান্ত্রিকতা থেকে কোন এক স্বর্গে পৌঁছে যাওয়া; চোখ বন্ধ করে অনুভবে প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যাওয়া। মাঝে মাঝে মেঘ আমাদের ছুঁয়ে গেল। মেঘের ঠান্ডা শীতলতা আমাদের চোখে মুখে দোলা দিয়ে গেল। আমি একের পর এক ছবি তুলতে লাগলাম। চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না স্রষ্টার সৃষ্টি।  সৌন্দর্যের সীমা থাকা দরকার। মনে মনে ভাবলাম, উচ্চতার ভয়ে যদি এখানে না আসতাম তাহলে মিস করতাম নেপাল ভ্রমণের সবচেয়ে সুন্দর ও রোমাঞ্চকর জায়গার দর্শন। একটু পরে দেখা পেলাম মেঘেদের। আর ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকল তীব্র শীত। কাঁপতে লাগলাম রীতিমতো।

    ঠান্ডা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে অর্ডার দিলাম গরম গরম চায়ের, সাথে নিলাম পপকর্ণ। গরম চা পানের ফলে শরীর বেশ খানিকটা উষ্ণ হলো। একটি নয়, দুটি নয়, তিনটি রেস্তোরাঁ এখানে। আছে নিরামিষ-আমিষের ভিন্ন ব্যবস্থা। কেউ অর্ডার দিলে সামনাসামনি রান্না করে দেওয়ার বন্দোবস্ত আছে। এখানে এখন তৈরি হচ্ছে একটি রিসোর্ট। আছে শিশুদের ছোট পার্ক, ঘোড়ায় চড়ে পাহাড়ি পথে চলার ব্যবস্থা। বেলা গড়িয়ে এল। এবার নামতে হবে। আবার কেবল কারের স্টেশনে গিয়ে চড়লাম কারে। এবার ভয় খানিকটা কমে গেছে। আবারও বিস্ময়, আনন্দ, মেঘ ছোঁয়ার আনন্দ নিয়ে ফিরে এলাম।

    সপ্তাহের সাত দিনই যাওয়া যায় চন্দ্রগিরি। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে প্রতি কর্মদিবসে কেবল কার। ছুটির দিন চলে সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। ভাড়া প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ১ হাজার ১০০ নেপালি রুপি। তিন ফুটের নিচে উচ্চতার শিশুদের ভাড়া দিতে হবে না। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার শিশুরা ৪০ শতাংশ কম ভাড়ায় ভ্রমণ করত পারবে। 


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    A PHP Error was encountered

    Severity: Core Warning

    Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'tidy.so' (tried: /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so (libtidy.so.5: cannot open shared object file: No such file or directory), /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so (/opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory))

    Filename: Unknown

    Line Number: 0

    Backtrace: