রাবিপ্রবিতে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মহড়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে পিসিসিপি


চাঁদার দাবিতে রাবিপ্রবিতে পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা হানা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করায় তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে (২৭ জুন) শুক্রবার দুপুর বারোটায় গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ 'পিসিসিপি' রাঙ্গামাটি জেলা শাখা।
বিবৃতিতে পিসিসিপি রাঙ্গামাটির জেলা সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, রাঙ্গামাটির সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ রাঙ্গামাটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) উন্নয়ন কাজ থেকে চাঁদার দাবিতে পাহাড়ি চাকমা স্বশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা হানা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিনগত রাত পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে অবৈধ অস্ত্রধারী সাত সন্ত্রাসী প্রবেশ করে।
এ সময় চাকমা সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে জড়িত ১৫ জন শ্রমিকের মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে।
শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীরা হুমকি প্রদান করে বলে, চাঁদা না পাওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখবে এবং চাঁদা না দিলে ব্রাশ ফায়ার করে শ্রমিকদের মেরে ফেলা হবে।
সন্ত্রাসীদের উপস্থিতিতে কর্মরত শ্রমিকরা এসময় ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে।
পিসিসিপি'র নেতৃবৃন্দরা বলেন, রাঙ্গামাটির শহরের আসামবস্তী-কাপ্তাই সংযোগ সড়কটির পুরো এলাকায় পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস), প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গ্রুপের প্রভাব বলয় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশ্বস্ব সূত্রে থেকে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দরা জানতে পারেন, এর আগে উন্নয়ন কাজের শুরুতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে সন্তু গ্রুপের পিসিজেএসএস চাঁদার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলো।
এরপর উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন গুলোকে চাঁদা পরিশোধ করায় উন্নয়ন কাজ পুরোদমে শুরু হয়। এ ঘটনা যেতে না যেতে মে মাসের শেষের দিকে সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ থেকে বিশাল অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে বসে।
এরপর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিছুদিন পুরো এলাকায় টহল জোরদার রাখলে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা কিছুদিন গা ঢাকা দেয়। এরপর বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে সুযোগ বুঝে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখতে নিষেধ করে এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের ১৫টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় বলে জানান শ্রমিকরা।
পিসিসিপি নেতৃবৃন্দরা আরো বলেন, রাঙ্গামাটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে শ্রমিকদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করার দৃষ্টান্ত দেখালো পাহাড়ি চাকমা সন্ত্রাসীরা।
এই সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে পার্বত্য অঞ্চলে কেউ নিরাপদ নয়, পাহাড়ের শান্তি-সম্প্রীতি ও আস্থা-বিশ্বাস ঠিক রাখতে হলে সকল জাতিগোষ্ঠীকে এগিয়ে আসতে হবে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কোন জাতিগোষ্ঠী যাতে প্রশ্রয় না দেয় সেজন্য সকলের সজাগ থাকতে হবে।
সেই সাথে রাবিপ্রবিতে সশস্ত্র মহড়া দেওয়া প্রত্যেকটি পাহাড়ি সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছে পিসিসিপি রাঙ্গামাটির জেলা শাখা।
এছাড়াও পাহাড়ের সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষের নিরাপত্তায় পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ এর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে তাদের প্রত্যেকটি সশস্ত্র ক্যাডারকে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছে পিসিসিপি।
এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও নিরাপত্তা যদি আবারো বিঘ্ন করার চেষ্টা করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাহলে পিসিসিপি কঠোর আন্দোলন ও প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছে।
