শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমল ১৮ হাজার কোটি টাকা

মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমল ১৮ হাজার কোটি টাকা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ঋণ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কম। আমানতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। তবু ব্যাংক খাতে নগদ টাকার সংকট চলছে। সংকট মেটাতে অতিরিক্ত তারল্যেও হাত পড়ছে ব্যাংকগুলোর। গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় নভেম্বরে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত তারল্য কমেছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যাশ তারল্যও কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকাররা বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে মানুষের বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। আবার সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নগদ টাকায় ডলার কেনায় টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আটকে গেছে। সরকার বাজার থেকে বিলের অকশনের মাধ্যমে টাকা তুলে নিচ্ছে। এছাড়া বিতরণ করা ঋণ আদায় না হওয়া ও খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে। তাই অতিরিক্ত তারল্যে হাত দিতে হচ্ছে, যার কারণে ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত তারল্য কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বরে তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ। একই সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ ঋণের চেয়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি ভালো হওয়ার পরও ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে ভুগছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নভেম্বর শেষে অতিরিক্ত তারল্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকায়, যা এক মাস আগে অর্থাৎ অক্টোবর শেষে ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে অতিরিক্ত তারল্য কমেছে ১৮ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত জুলাই শেষে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ১ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা।

নভেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ৪৮ হাজার কোটি টাকা, বেসরকারি ব্যাংকে ৫৬ হাজার কোটি টাকা এবং ৩৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশি ব্যাংকে।

এছাড়া নভেম্বর শেষে অতিরিক্ত ক্যাশ তারল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়, যা সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত প্রয়োজনীয় বিধিবদ্ধ জমার হার (এসএলআর) বাজায় রাখার পর অতিরিক্ত তারল্য গণনা করা হয়। আর নির্ধারিত নগদ জমার হার (সিআরআর) বাজায় রাখার পর অতিরিক্ত ক্যাশ তারল্য গণনা করা হয়।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ডলারের দর ২৫ শতাংশ বেড়েছে। যে কারণে আমদানিতে খরচ বেড়েছে। ফলে অস্বাভাবিক হারে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের খরচ মেটাতে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে। তাই মানুষ বেশি টাকা তুলছে। তাছাড়া সরকার বাজার থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো ডলারের সংকট মেটাতে টাকা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে। এছাড়া ঋণ থেকে আদায় হচ্ছে না। যে কারণে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিচ্ছে। এতে অতিরিক্ত তারল্য ও ক্যাশ তারল্য কমে আসছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পর অতিরিক্ত তারল্যের প্রয়োজন রয়েছে। তখন যদি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয় তাহলে ঋণ দেয়া সম্ভব হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, নভেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোয় মোট তারল্য ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর ন্যূনতম প্রয়োজনীয় তারল্য ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে তারল্য সংকটের কারণে বেশিরভাগ ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করছে। পাশাপাশি উচ্চ সুদে কল মানি থেকেও ধার করছে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ২০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার কল মানি থেকে ব্যাংকগুলোর ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, যার গড় সুদহার ৯ দশমিক ২১ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকর একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে শুরু করেছে। এ কারণে অতিরিক্ত তারল্য ধারাবাহিকভাবে কমছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের ঋণ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তফসিলি ব্যাংক থেকে ২৭ হাজার ৯৫২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের ৩৫ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং তারল্য সংকট এক দিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চলা লুটপাটের কারণে ব্যাংক থেকে যেসব অর্থ বেরিয়েছে সেগুলো ফেরত আসছে না। খেলাপি ঋণ বাড়ায় এর বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এছাড়া চড়া মূল্যস্ফীতি ও আস্থার সংকটে অনেকে ব্যাংকে টাকা রাখছে না। একটি শ্রেণি টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোও তারল্য ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করতে পারছে না।


শেয়ার বিজ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ

আরও পড়ুন