হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের প্রজনন বিপর্যয়ের আশঙ্কা


মিঠাপানির মেজর কার্প জাতীয় মাছ যেমন—রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ—এর প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য হালদা নদী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। এ নদীর জলজ জীববৈচিত্র্যে রয়েছে ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি এবং বিরল গাঙেয় ডলফিন, যা একে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত চলে কার্পজাতীয় মা মাছের প্রজনন মৌসুম। এই সময়ের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোঁ’কে কেন্দ্র করে, যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল এবং পানির তাপমাত্রা, স্রোত, স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, ও পিএইচ-এর মতো বিভিন্ন ভৌত-রাসায়নিক উপাদান অনুকূল থাকে, তবে হালদায় স্বাভাবিকভাবে ডিম ছাড়ে মা মাছ।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবার সেই অনুকূল পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি। বজ্রপাত ও বৃষ্টিপাতের ঘাটতির কারণে প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো এখনো উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ফলে ইতোমধ্যে কয়েকটি জোঁ পার হলেও হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়েনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীতে পলি জমাট, লবণাক্ততার প্রভাব এবং অন্যান্য পরিবেশগত কারণে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় ও স্থান (কূম) এখন পরিবর্তিত হচ্ছে। তবে আশা করা হচ্ছে, এপ্রিলের শেষ দিক ও মে মাসের অমাবস্যার জোঁ'তে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নামলে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে।
হালদা বিশেষজ্ঞ ড. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নদীতে প্রবেশ করলে মা মাছ স্বাভাবিকভাবে ডিম ছাড়বে।
এদিকে চলতি মে মাস হলো ডিম ছাড়ার ভরা মৌসুম। কিন্তু এখনও পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মা মাছ ডিম ছাড়তে পারেনি। কয়েকদিন আগে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ডিম সংগ্রহকারীদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে।
তবে অনুকূল পরিবেশ না থাকলে সম্ভাবনা রয়েছে জুন মাসের শেষ ভাগে, বিশেষ করে ১৫ থেকে ২০ জুনের অমাবস্যার জোঁ'তে মা মাছ ডিম ছাড়বে। সেক্ষেত্রে প্রকৃতি অনুকূল হলে আবারও প্রাণ ফিরে পাবে হালদার মৎস্য প্রজনন ব্যবস্থা।
নতুন/কাগজ/আসলাম/হাটহাজারী
