হাটহাজারী বিমানবন্দর: অতীতের স্মৃতি থেকে ভবিষ্যতের বিনোদনকেন্দ্র


চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার এক ঐতিহাসিক স্থান হলো পুরোনো বিমানবন্দর এলাকা। হাটহাজারী সদর থেকে হাসপাতাল সড়ক ও মিরেরহাটের পশ্চিমে সড়ক দিয়ে বিমানবন্দরে যাতায়াত করা সম্ভব হলেও, প্রতিষ্ঠার শুরুতে শুধু মিরেরহাট সংলগ্ন সড়কই ছিল এ স্থানে প্রবেশের একমাত্র পথ। এক সময় নাজিরহাট শাখা লাইনের ট্রেনে হাটহাজারী বা চারিয়া রেলস্টেশনে নেমে হেঁটে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হতো।
১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান-ব্রিটিশ যুদ্ধ শুরুর পর, এই বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন খাদ্য সংকটে পড়া এলাকার হাজারো মানুষ—বিশেষ করে হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজানসহ আশপাশের উপজেলার মানুষ—এখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। লোকমুখে প্রচলিত আছে, সেই সময়ের নির্মাণ কাজই অনেক পরিবারকে অভাব থেকে রক্ষা করেছিল।
যুদ্ধের অবসান ঘটে ১৯৪৫ সালে, এবং এর পরপরই বিমানবন্দরটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই নির্মিত অবকাঠামোগুলো অবহেলায় পড়ে থাকে। স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পলেস্তারা খসে পড়েছে, অনেক জায়গার ইট ঝরে গেছে, আর আগাছায় ঢেকে গেছে ভবনের চারপাশ। সিগন্যাল ওয়ারের ঘর এবং প্রশাসনিক ভবনের এখনকার অবস্থা খুবই করুণ। রানওয়ের কিছু অংশ এখনও দৃশ্যমান থাকলেও, তা সময়ের সাথে ক্ষয় হতে শুরু করেছে।
পরবর্তীতে এই এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে কিছু সরকারি প্রকল্প। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জেলা দুগ্ধ খামার এবং ২০০৬ সালে জেলা ছাগল খামার। এর পাশাপাশি গড়ে উঠেছে গুচ্ছগ্রাম, আদর্শ গ্রাম ও আশ্রয়ন প্রকল্প। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফার্ম বেইস ক্যাম্পাসও এখানে চালু হয়েছে। রয়েছে কৃষি ইনস্টিটিউট, হর্টিকালচার সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বিমানবন্দরের রানওয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে দোকানপাট ও ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
স্থানীয়দের মতে, পাহাড় ও সমতলের অপূর্ব মেলবন্ধনে গঠিত এই স্থানটি হতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। বিশাল পরিত্যক্ত এলাকা, ইতিহাসের ছোঁয়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মিলে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি ঐতিহ্যভিত্তিক পর্যটন এলাকা, যা সরকারের জন্য রাজস্ব আয়ের নতুন দ্বার খুলে দিতে পারে।
বিশেষ করে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনো জায়গাটিকে ‘জাপান-ব্রিটিশ যুদ্ধের বিমানবন্দর’ বলেই চিহ্নিত করেন। তাঁদের স্মৃতিচারণা এবং স্থানীয়দের চাওয়া, এই এলাকায় শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের জন্য একটি আধুনিক মিনি শিশু পার্ক গড়ে তোলা। তাদের মতে, এটি শুধু এলাকাবাসীর জন্য নয়, পুরো জেলার জন্যই একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ হতে পারে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হলে, হাটহাজারীর এই ইতিহাসসমৃদ্ধ স্থানটি হয়ে উঠতে পারে নতুন প্রজন্মের জন্য বিনোদন, শিক্ষা ও ঐতিহ্যের এক চমৎকার মিলনস্থল।
