শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ঐতিহাসিক নবাব ফয়জুন্নেছা বাড়িতে জাদুঘরের নতুন অধ্যায়

ঐতিহাসিক নবাব ফয়জুন্নেছা বাড়িতে জাদুঘরের নতুন অধ্যায়
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

কুমিল্লার লাকসামে ঐতিহাসিক নবাব ফয়জুন্নেছা জমিদার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরের নতুন তিনটি গ্যালারি ও অন্দরমহল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এসব গ্যালারির উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জাদুঘরের মহাপরিচালক নাফরিজা শ্যামার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও, অনিবার্য কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম এবং জাতীয় জাদুঘরের সচিব সাদেকুল ইসলাম।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক নতুন সময় পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক ও জাদুঘর সমন্বয়কারী এম এস দোহা, নবাববাড়ি জাদুঘরের ইনচার্জ মো. আনোয়ার হোসেন, এবং স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

নতুন গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে ১২৫টি ঐতিহাসিক নিদর্শন
নবনির্মিত গ্যালারিগুলোতে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর জীবন, কর্ম ও স্মৃতিবিজড়িত ১২৫টি নতুন নিদর্শন স্থান পেয়েছে। একই সঙ্গে ‘সমন’ নামের একটি অতিথিশালাও উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখানে নবাব পরিবারের সদস্যরা তিনদিন পর্যন্ত বিনামূল্যে অবস্থান করতে পারবেন। এছাড়া পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি পরিশোধের মাধ্যমে অবস্থানের সুযোগ রাখা হয়েছে।

জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় আরও একটি গ্যালারি সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

নবাব ফয়জুন্নেছার জীবন ও ঐতিহাসিক অবদান
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিমগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার জমিদারির উত্তরাধিকারী হয়ে তিনি হয়ে উঠেন এক ব্যতিক্রমধর্মী নারী নেত্রী ও শিক্ষানুরাগী। ১৮৭৩ সালে তিনি কুমিল্লা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নারীশিক্ষা ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০২৪ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।

ওয়াকফ সম্পদের ইতিহাস ও চ্যালেঞ্জ
১৮৯১ সালে (১২৯৮ বঙ্গাব্দ) তিনি তার সম্পত্তি ওয়াকফ লিল্লাহ ঘোষণা করেন। ওয়াকফ দলিল অনুযায়ী মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২১,৬২৫.২৮ একর। তবে মোতাওয়াল্লীদের কারসাজি ও প্রশাসনিক দুর্বলতায় এই সম্পদের বেশিরভাগ অংশই বেহাত হয়ে যায়। বাড়ির মূল্যবান স্থাপনা ও নিদর্শনও সময়ের সাথে সাথে চুরি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এই অবস্থার প্রেক্ষিতে, ২০১৭ সালে সরকার ৪.৫৫ একর জমি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে প্রত্নসম্পদ হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে।

জাদুঘর প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন উদ্যোগ
তৎকালীন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ ২০২৩ সালের ২ জুন নবাব বাড়ি পরিদর্শন করে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এরপর ২৮ আগস্ট সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তক্রমে ২০ সেপ্টেম্বর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।

এরই ধারাবাহিকতায়, ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে দর্শনার্থীরা মাত্র ২০ টাকার প্রবেশমূল্যে গ্যালারিগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।


নতুন/কাগজ/রিপন/লাকসাম
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ

আরও পড়ুন