সূর্যের আলোয় দোলছে কৃষ্ণচূড়া, হাটহাজারী জুড়ে বসন্তের রঙিন ছোঁয়া


বাংলা বছরের বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস মানেই প্রকৃতির রঙে রঙিন হয়ে ওঠার সময়। এই সময়টিকে আমাদের প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতিতে বলা হয় মধুমাস। এ মধুমাসে বাংলার প্রতিটি অঞ্চল সেজে ওঠে ফুল আর ফলের মাধুর্যে। হাটহাজারীর অলিগলি থেকে শুরু করে খোলা মাঠ—প্রতিটি কোণে এখন দোল খাচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙিন ঝাঁক।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য উপাদান কৃষ্ণচূড়া। বৈশাখের কাঠফাটা রোদে যখন মাটির রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তখনই দিগন্তজুড়ে আগুন লাল কৃষ্ণচূড়া ছড়িয়ে দেয় প্রকৃতির আপন আলো। বিশেষ করে হাটহাজারীর স্কুল-কলেজ, বাজার কিংবা গ্রামের মেঠোপথে এই কৃষ্ণচূড়া যেন প্রকৃতির নিজের হাতে আঁকা জলরঙের ছবির মতো মনকে করে বিমোহিত।
মধুমাসে যেমন আম, জাম, লিচু, কাঁঠালের মতো মৌসুমি ফলের আধিক্য চোখে পড়ে, তেমনি ফুলের রাজ্যেও চলে প্রতিযোগিতা। শিউলি, রাধাচূড়া, পলাশ—সব কিছুকে ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন আগুন যেন অন্য রকম এক উন্মাদনা সৃষ্টি করে। প্রজাপতি, মৌমাছি আর নানা রকম পাখিরাও মধু খুঁজে এসে ঘোরে এই কৃষ্ণচূড়ার গাঢ় লাল পাপড়িতে।
হাটহাজারীর আবহাওয়া আর সবুজ পরিবেশে কৃষ্ণচূড়ার উপস্থিতি যেন এক নতুন জীবনের বার্তা দেয়। গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দেওয়া এই লাল ফুলগুলো দুপুরের রোদে পড়ে সোনালি ঝিলিক তোলে। যেন দূর থেকে কেউ হাতছানি দিয়ে ডাকছে—"এসো, আমার রঙে রঙিন হয়ে যাও!" পথচারী হোক বা পথশিশু, তরুণ কবি হোক কিংবা নৈশপ্রহরী—সবাই এক মুহূর্তের জন্য হলেও দাঁড়িয়ে যান এই মনকাড়া দৃশ্যের সামনে।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, “প্রতিদিন সকালে হাঁটার সময় কৃষ্ণচূড়ার নিচ দিয়ে গেলে মনে হয় কোনো কবিতার ভিতর দিয়ে হাঁটছি। এমন লাল রঙের সৌন্দর্য আর কোথায় পাওয়া যায়!”
শুধু সৌন্দর্যই নয়, কৃষ্ণচূড়া যেন হয়ে উঠেছে এক আবেগের নাম। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার নিচে দাঁড়িয়ে কেউ স্মৃতিচারণ করে প্রিয়জনের, কেউবা দাঁড়িয়ে থাকেন নিঃশব্দ ভালোবাসার অপেক্ষায়।
হাটহাজারীর প্রতিটি অঞ্চলে এখন যেন একটাই চিত্র—সূর্যের আলোয় লাল কৃষ্ণচূড়ার ফুলেরা দুলছে বাতাসে, চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে রঙ, ঘ্রাণ আর অনন্ত ভালোবাসার গল্প।
