২০২৪ সালের মূল্যায়ন ও ২০২৫ সালের পরিকল্পনা


বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম (UNCT) এর মধ্যে যৌথ সহযোগিতার অন্যতম দিক হলো টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে পারস্পরিক অঙ্গীকার।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (JSC) দ্বিবার্ষিক বৈঠকে ২০২৪ সালের অগ্রগতি পর্যালোচনা, জাতিসংঘের ২০২৪ সালের কান্ট্রি রেজাল্ট রিপোর্ট প্রকাশ এবং ২০২৫ সালের জন্য কৌশলগত অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়।
এই বৈঠক জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো (UNSDCF 2022–2026) বাস্তবায়নের মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সহযোগিতার নতুন মাত্রা নির্ধারণ করে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশে ২০২৪ সালে উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ৪ কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা সেবায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫৮০,০০০ শিশু সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে উপকৃত।
৫৬ লক্ষ কিশোরীকে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) টিকা প্রদান, যার অন্তর্ভুক্তি ছিল ৯৩%। ১১,০০০ এর বেশি তরুণ-তরুণী ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা এবং ১৭.২ লক্ষ মানুষকে মানবিক সহায়তা প্রদান।
বেসরকারি খাতের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ৪,০০০-এর বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি। ১১৬টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার উন্নয়নে সহায়তা।
৬৬% ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত কার্যকর করা হয়েছে। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিল এবং পারিবারিক সহিংসতা আইন সংশোধনে জাতিসংঘের সমর্থন।
জাতিসংঘের সহযোগিতায় ২০২৫ সালে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে নিম্নলিখিত পাঁচটি কৌশলগত অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে:
* অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন
* সমতার ভিত্তিতে মানব উন্নয়ন ও কল্যাণ
* সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কাঠামো
* অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা
* জেন্ডার সমতা ও জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা নির্মূল
বিশেষ অধিবেশনে জাতিসংঘের ‘Declaration on Future Generations’ ও তরুণদের মতামত জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্তির উপর আলোচনা হয়। এই অধিবেশন ২০২৪ সালের “সামিট অব দ্য ফিউচার”-এর অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এক বছরের জন্য বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যাতে এটি জাতীয় উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। একইসাথে UNSDCF-এর সময়কাল ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বিশেষ অধিবেশন আলোচনায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিস গোয়েন লুইস বলেন, “বাংলাদেশ একটি চ্যালেঞ্জিং বছর পার করলেও জনগণের দৃঢ়তা প্রশংসনীয়। জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সংস্কার, সহনশীলতা, অর্থনৈতিক রূপান্তর ও জেন্ডার সমতায় সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এ আলোচনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোঃ শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, “জলবায়ু অর্থায়ন প্ল্যাটফর্মে অগ্রগতি ও যুব কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘তিন শূন্য’-র ভিশন বাস্তবায়নে জাতিসংঘের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের যৌথ উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো ২০২৫ সালের শেষ দিকে চূড়ান্ত মূল্যায়নের দিকে এগোচ্ছে। এসডিজি অর্জন ও এলডিসি থেকে উত্তরণকে ত্বরান্বিত করতে এই বৈঠক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। পরবর্তী JSC বৈঠক ২০২৫ সালের নভেম্বর/ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অর্জিত অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পথরেখা আরও সুস্পষ্ট হবে।
