শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

১০ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

১০ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত দায়ের হওয়া এমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় আইনি যাচাই-বাছাই শেষে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তথ্যটি বাসসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখার কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার ৫০৬টি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্ব স্ব জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে পত্র মারফত মামলার নম্বর উল্লেখ করে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। 

এ ছাড়া জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় উক্ত মামলাগুলো প্রত্যাহার করে না চালানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে হওয়া হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এরমধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।

জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে থাকবেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদস্যসচিব অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সদস্য পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকার জন্য পুলিশের একজন ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকার মামলাগুলোর জন্য মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর)। 

জেলা কমিটির কাছে যদি মনে হয় মামলাটি রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে হয়রানির জন্য করা হয়েছে, তাহলে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য কমিটি সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সেই সুপারিশ, মামলার এজাহার, অভিযোগপত্রসহ আবেদন পাওয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী তথ্যাদিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন।

এ ছাড়া ব্যক্তি পর্যায়েও আবেদন করা যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব অথবা আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বরাবরেও আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে, সেই আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকা প্রস্তুত করে আইন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন আকারে অনুমোদন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়। পরে আবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফেরত আসার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্ব স্ব জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বরাবর চূড়ান্তভাবে চিঠি পাঠানো হয়। 

জেলা পর্যায়ের কমিটির কার্যপরিধি ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশপ্রাপ্তির পর মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে। প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তত করবে এবং মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটির সভাপতি হিসেবে আছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সদস্যসচিব হিসাবে দায়িত্বপালন করছেন জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব। আর কয়েকজন রয়েছেন সদস্য হিসেবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার শিকার যে কেউ এই সুযোগ পাবেন। তবে আবেদনপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মামলার এজাহার এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযোগপত্রের (চার্জশিট) সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করতে হবে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) ফয়সল হাসান বলেন, নিরাপরাধ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অনর্থক হয়রানি থেকে পরিত্রাণ দেওয়ার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ