বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখে পৌঁছেছে: ইউএনএফপিএ


২০২৫ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৫৭ লাখে-এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ)। সংস্থাটির মতে, এ জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই কর্মক্ষম, যা দেশের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জনের সুযোগ তৈরি করেছে।
সোমবার (৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫’-শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে এসব তথ্য তুলে ধরেন ইউএনএফপিএ’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।
তিনি জানান, ২০২৫ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ বিলিয়নে। এর মধ্যে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭৫.৭ মিলিয়ন (১৭ কোটি ৫৭ লাখ)। তাদের অর্ধেক নারী এবং প্রায় ১১৫ মিলিয়ন কর্মক্ষম বয়সী মানুষ, যা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।
ক্যাথরিন বলেন, “জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ-প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ-৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব, যা দেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।”
তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে তিনি জানান, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ কিশোর-কিশোরী। ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, ‘বাস্তবিক প্রজনন সংকট: একটি পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে প্রজননের লক্ষ্য’। এতে বলা হয়, বর্তমান বিশ্বে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শুধু জন্মহার নয়, বরং কাঙ্ক্ষিত সন্তান জন্মদানে সক্ষমতা অর্জন ও সেই সুযোগ পাওয়া।
ক্যাথরিন বলেন, “বিশ্বজুড়েই, বিশেষত নারী ও তরুণদের জন্য, প্রজননের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের মোট প্রজনন হার (TFR) বর্তমানে ২.১, যা একটি মধ্যম স্তরে রয়েছে। তবে দেশের কিছু অঞ্চলে কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণের হার বেশি। এর জন্য দায়ী বাল্যবিবাহ, জন্মনিরোধ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং যৌনশিক্ষার সীমাবদ্ধতা।
বিশ্ব পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ায় নারীরা গড়ে মাত্র ০.৮টি সন্তান জন্ম দিচ্ছেন, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। অপরদিকে, আফ্রিকার নাইজারে এই হার ৫.৮।
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ নিয়ে ক্যাথরিন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার জিডিপির ০.৭ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দিচ্ছে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে তা জিডিপির ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশে উন্নীত হবে।”
বিনিয়োগ বাড়ালে দক্ষ ধাত্রী ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ এবং নারীদের জন্য পছন্দমতো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএফপিএ কর্মকর্তারা ছাড়াও উন্নয়ন সহযোগী, সরকারি প্রতিনিধি এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এন কে/বিএইচ
