শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ;

দশ লাখ মানুেষর পাবলিক টয়লেট ৪ টি!

দশ লাখ মানুেষর পাবলিক টয়লেট ৪ টি!
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

দশ লাখ রূপগঞ্জবাসীর জন্য মাত্র ৪ টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এগুলোর দশাও বেহাল। নাকে রুমাল গুঁজেও অনেক সময় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঢোকা যায় না এসব টয়লেটে। এছাড়া রূপগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সরকারী অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ ষ্ট্যান্ডে নেই পাবলিক টয়লেট। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হয় এসব অফিসে আসা লোকজনদের। দশ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত রূপগঞ্জে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হন কয়েক লাখ মানুষ। আর সব সাধারণ কাজকর্মের মতো তাদের প্রয়োজন হয় পাবলিক টয়লেটের। তবে তারাব পৌরসভা দাবী করেছেন, তারাব পৌরসভায় আরো তিনটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর উপজেলা প্রশাসন দাবী করেছেন চলতি বছরে দুটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। 


উপজেলা সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জের আয়তন ২৩৪.৭৬ বর্গ কিলোমিটার। তারাব ও কাঞ্চন পৌরসভা এবং ৭ টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। তারাব পৌরসভা, ভুলতা ইউনিয়ন, গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন ও কাঞ্চন পৌরসভা শিল্প এলাকা। এসব এলাকায় স্থানীয়দের পাশাপাশি শিল্পকারখানার হাজার হাজার শ্রমিক বসবাস করেন। এছাড়া ভাসমান মানুষের আনাগোনা বেশি এসব এলাকায়। জনবহুল এসব এলাকায় পাবলিক টয়লেট চাহিদা মাফিক নেই। তারাব পৌরসভার বিশ^রোড চত্ত্বরে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। গোলাকান্দাইল ষ্ট্যান্ডে রয়েছে একটি টয়লেট। আর কাঞ্চন পৌরসভার উত্তর বাজারে একটি ও দক্ষিণ বাজারে একটি টয়লেট রয়েছে।  

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ এসব পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ টয়লেটের অপর্যাপ্ততা, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশ, জনসমাগমপূর্ণ স্থানে টয়লেট না থাকা, সঠিক তদারকির অভাব, নির্ধারিত অর্থের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাববোধের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা মুড়াপাড়া বাজারে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ আসে। এ ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস রয়েছে এখানে। এসব দপ্তরে কাজের জন্য আসা মানুষের মধ্যে অনেকেই পাবলিক টয়লেটের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ভুলতা ষ্ট্যান্ড, রূপসী ষ্ট্যান্ড, বরপা ষ্ট্যান্ড, বরাবো ষ্ট্যান্ড এলাকায় দূর পাল্লার গণপরিবহনের কাউন্টার থাকার কারণে যাত্রীরা পাবলিক টয়লেটের অভাবে ভুগছে প্রতিনিয়ত। উপজেলার আশেপাশের মসজিদ, মাদ্রাসা এবং প্রাতিষ্ঠানিক টয়লেটগুলোর অনেকটাই থাকে তালাবদ্ধ। যার কারণে বয়োবৃদ্ধদের নিজেকে সামাল না দিতে পেরে মাঝে মাঝে কাপড় নষ্ট হয়ে যায় অনেকের। 

উপজেলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়। এ সকল কার্যালয়ে প্রয়োজনে প্রতিদিন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কয়েকশ মানুষ আসে। কিন্তু উপজেলার মধ্যে কোনো পাবলিক টয়লেট না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তাদেরকে ধরনা ধরতে হয় বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে। কর্মকর্তাদের টয়লেট ব্যবহারের জন্য তাদের অনুরোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে বেশি বিপাকে পড়ে নারীরা। অনেকে মুখ ফুটে তার সমস্যার কথা বলতেও পারে না। ভোলাব টাওরা থেকে আসা কুলসুম বেগম বলেন, ভাই উপজেলায় আইছিলাম কামে (কাজে)। প্রশ্রাবের বেগ পাইলে কোন জায়গা খুঁইজা না পাইয়া পাশের এক বাড়িতে যাই। ওহানে গেলে ঐ বাড়ির লোকজন গ্যানগ্যান করে। 
তারাব পৌরসভার বিশ^রোডে অবস্থিত পাবলিক টয়লেটে গিয়ে দেখা গেছে, বাহিরে ধোঁয়ামোছা রয়েছে। তবে ভেতরে নোংরা পরিবেশ। লোকজনদের কাছ থেকে প্রশ্রাব করার জন্য নিচ্ছে ৫ টাকা আর বাথরুম করার জন্য নিচ্ছে ১০ টাকা। কথা হয় বাথরুম করতে আসা পথচারী রবিন মিয়ার সঙ্গে। সে সারুলিয়া থেকে এসছেন কাজে। বাধরুমের বেগ পাওয়ায় তিনি এখানে যান। তিনি বলেন, ভাই টাইলস করা। কিন্তু ভেতরে গেলে নাকে রুমাল চেপে রাখতে হয়। পরিবেশ নোংরা। গোলাকান্দাইল টয়লেটে গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ স্যাঁতস্যাতে। ভেতরে দুর্গন্ধ। টয়লেটের সামনে কথা হয় রমজান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই প্রশ্রাব করতে দিতে হয় ৫ টাকা। তার উপড় দুর্গন্ধ। না পারতে এখানে আসা। 


উপজেলার সদরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, যেখানে পাবলিক টয়লেট খুবই জরুরি। এর মধ্যে উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র ভুলতা, কাঞ্চন মায়ারবাড়ি, উপজেলা পরিষদ, ভূমি অফিসে লোক সমাগম অনেক বেশি। দূর-দুরান্ত থেকে আসা হাজারো মানুষ প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বেছে নেয় রাস্তার পাশে লোকচক্ষুর আড়ালের জায়গা। যে কারনে মানুষের চলাচলে পোহাতে হয় ব্যাপক দুর্ভোগ। ভোগান্তির শিকার মানুষগুলোর এই ছোট্ট দাবি পূরণে আজ পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেনি।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলনামূলকভাবে কম ‘টয়লেট’ ব্যবহার করায় নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভুগছে কর্মজীবী ও পেশাজীবী নারীরা। পাবলিক টয়লেটের সুব্যবস্থা না থাকায় পথচারী, হকার, রিকশাচালক, ভিক্ষুক ও ভাসমান মানুষ বাধ্য হয়েই তারা ফুটপাতের পাশে, পার্কে, লেকে, সড়কের পাশে বিভিন্ন উন্মুক্ত জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে ও জনস্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। একই সাথে পরিচ্ছন্ন রাখা যাচ্ছে না। ক্রমে হয়ে উঠছে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকী, বসবাসের অযোগ্য। 


তারাব পৌরসভার সচিব তাজুল ইসলাম বলেন, তারাব পৌরসভা অনেক জনবহুল এলাকা। পাশাপাশি শিল্প এলাকা। এখানে বিশ্বরোডে একটি টয়লেট রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে রূপসী ষ্ট্যান্ড, বরপা ষ্ট্যান্ড ও বরাব ষ্ট্যান্ডে আরো তিনটি টয়লেট নির্মাণ করার। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আইভী ফেরদৌস বলেন, রূপগঞ্জের তারাব, ভুলতা এলাকায়তো ভাসমান মানুষ অনেক। এসব এলাকায় আরো বেশি টয়লেটের প্রয়োজন। তুলনামূলক কম হলে স্বাস্থ্যঝূঁকিতো রয়েছেই। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চলতি বছরে ২ টা পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। তবে কোথায় নির্মাণ করা হবে তার স্থান ঠিক হয়নি এখনো। 


নতুন/কাগজ/রূপগঞ্জ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন