উৎসব, উদ্দীপনা আর ঐতিহ্যে মুখর রমনার বৈশাখ


পয়লা বৈশাখ, বাঙালির চিরন্তন প্রাণের উৎসব। বর্ষবরণের এমন দিনে রাজধানী যেন রঙিন উৎসবের নগরীতে রূপ নেয়। তপ্ত দুপুর, রোদের প্রখরতা—সব উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভিড় জমিয়েছেন রমনা পার্কে। কেউ এসেছেন পরিবারের ছোট সদস্যদের নিয়ে, কেউ বন্ধু বা প্রিয়জনের হাত ধরে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত রমনার প্রতিটি প্রান্ত জেগে উঠেছিল লোকজ সুর, ঢাক-ঢোল, বাঁশি ও প্রাণখোলা আড্ডায়। তরুণ-তরুণীরা সেজেছেন সাদা-লাল শাড়ি, রঙিন পাঞ্জাবি আর ফুলের টিপে। রমনার গাছগাছালি, খোলা মাঠ আর ছায়াঘেরা পথ যেন হয়ে উঠেছে বৈশাখের প্রাণকেন্দ্র।
দর্শনার্থীদের অনেকেই বলছিলেন, চলমান রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি এবারের বৈশাখকে করেছে আরও প্রাণবন্ত। স্বস্তির পরিবেশে পরিবারসহ উদযাপন করতে পারায় তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মোহাম্মদপুর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছি। এরপর এসেছি রমনায়। লোকসংগীত শুনছি, ছবি তুলছি—প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেও খুব ভালো লাগছে। এটাই আমাদের সংস্কৃতি।”
একইভাবে সুমন ও সিমা নামের এক দম্পতি জানালেন, “প্রতিবছরই আসি। তবে এবারটা অন্যরকম। চারদিকে শুধু হাসিমুখ। এই শান্তি আর সংস্কৃতির পরিবেশে বৈশাখ সত্যিই অর্থবহ।”
তেজগাঁও থেকে আসা প্রবীণ মো. মকবুল হোসেন বললেন, “গ্রামে যেমন মেলার পরিবেশ থাকত, এখন ঢাকায় রমনা পার্কে সেই আবহ পাই। আজকের দিনটা যেন ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দিল।”
শুধু রমনা পার্কই নয়—শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও আশপাশের এলাকায়ও ছিল মানুষের ঢল। শহরের রাস্তায় আঁকা আলপনা, লোকজ গানের সুর, বেলুন, ঘুড়ি আর মুখরতা—সব মিলে এক প্রাণবন্ত শহরের চিত্র।
উৎসব নির্বিঘ্ন করতে রমনার আশপাশের এলাকায় মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ, ওয়াচ টাওয়ার ও আর্চওয়ে। চলছিল নিয়মিত তল্লাশি, সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি। উৎসবপ্রেমী মানুষ নিশ্চিন্তে দিন কাটাতে পেরেছেন।
