বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

জনসমক্ষে নেই খামেনি, ইরানে বাড়ছে জল্পনা-কল্পনা

জনসমক্ষে নেই খামেনি, ইরানে বাড়ছে জল্পনা-কল্পনা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে নিয়ে শুরু হয়েছে জোরালো গুঞ্জন। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তিনি জনসম্মুখে অনুপস্থিত, যা নিয়ে ইরানের জনগণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে—তিনি কি সুস্থ আছেন? নাকি চলমান নিরাপত্তা উত্তেজনার মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন?

গত ১৩ জুনের পর থেকে খামেনিকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। এমনকি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির গুরুত্বপূর্ণ সময়েও তার কোনো বিবৃতি বা দৃশ্যমান নেতৃত্ব দেখা যায়নি, যা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং দ্য ডেইলি বিস্ট জানিয়েছে, তিনি হয়তো পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে চলমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছেন।

তবে শুক্রবার (২৬ জুন) খামেনির একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়, যেখানে তাকে কিছুক্ষণের জন্য বক্তব্য দিতে দেখা যায়। যদিও এতে তার শারীরিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ উপস্থিতি নিয়ে আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোনো বার্তা ছিল না।

বিশ্লেষকদের মতে, খামেনির এই অনুপস্থিতি কেবল স্বাস্থ্যগত প্রশ্নই নয়, বরং ইরানের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও সম্ভাব্য উত্তরসূরি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে। বিশেষ করে, তাঁর বয়স ও পূর্বের চিকিৎসাজনিত ইতিহাস বিবেচনায় রেখে অনেকেই মনে করছেন—এই শূন্যতা হয়তো ক্ষমতার একটি ধীর রদবদলের ইঙ্গিতও হতে পারে।

এদিকে ইরান সরকার জানিয়েছে, খামেনি সুস্থ আছেন এবং রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তবে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরিস্থিতি যতটা স্বাভাবিক দেখানো হচ্ছে, বাস্তবতা ততটা সরল নয়।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে অনুপস্থিত থাকায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেই তার কোনো নতুন বার্তা, নেই ছবি কিংবা ভিডিও—যার ফলে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজনীতিকদের মাঝেও।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর সাংবাদিক ফারনাজ ফসিহির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার সময় থেকেই খামেনি প্রকাশ্যে আসছেন না। এমনকি যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরেও তার কোনো বক্তব্য মেলেনি, যা ইরানি সমাজে অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার শঙ্কায় খামেনিকে রাজধানীর বাইরে একটি নিরাপদ বাঙ্কারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকেই কিছু পুরোনো ভিডিও ও নির্ধারিত পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে চালু থাকলেও, তাতে নেতার শারীরিক অবস্থান বা প্রকৃত পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়নি।

তেহরানে গত মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক সরাসরি খামেনির অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তার দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সামনে। জানতে চান—“মানুষ জানতে চায়, সর্বোচ্চ নেতার অবস্থা কী? তিনি কি সুস্থ আছেন?”

প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে ওই কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি কেবল বলেন, “যারা নেতার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তারা সতর্ক ও দায়িত্বশীল। ইনশাআল্লাহ, আমরা তাঁকে নিয়েই বিজয় উদযাপন করবো।”

তবে এতেই থামছে না জল্পনা। অনেকে বলছেন, খামেনির বয়স ও পুরোনো শারীরিক জটিলতা থাকায় হয়তো তিনি বিশ্রামে রয়েছেন। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, এটি ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হস্তান্তরের প্রস্তুতিরই অংশ।

বিশ্লেষকদের মতে, এমন সময়ে খামেনির অনুপস্থিতি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আলোচনার মোড় ঘুরছে—আর ঠিক তখনই ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী কণ্ঠস্বরের না থাকা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ