মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ছায়া


মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রভাব এখনো বেশ দৃশ্যমান। এই অঞ্চলের এক ডজনেরও বেশি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটি রয়েছে, যেখানে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—তিন ক্ষেত্রেই মার্কিন সামরিক উপস্থিতি সক্রিয়ভাবে বজায় রয়েছে।
জলসীমায় মোতায়েন রয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ; আকাশে টহল দিচ্ছে যুদ্ধবিমান ও অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এসব সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করছেন প্রায় ৪০ হাজারের মতো সামরিক ও বেসামরিক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, যারা ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
এই উপস্থিতি শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে—মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান যে এখনো কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটারই প্রতিচ্ছবি এটি।
এদিকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর পর এসব সামরিক ঘাঁটিগুলো তাদের (ইরানের) সম্ভাব্য টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু) হয়ে দাঁড়ায়। ইরান আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য তারা সব বিকল্প খোলা রাখছে।
ইরান এরইমধ্যে কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি কোনো নতুন বিষয় নয়। ইরাকে যুদ্ধের সময় ওই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আফগানিস্তানে যুদ্ধের সময়েও মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
গত বছর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা এবং লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক ও সামরিক জাহাজে ইয়েমেনের হুথিদের ক্রমাগত হামলার পর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ, ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা উপস্থিতি জোরদার করা হয়।
তবে সম্প্রতি তেহরানের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় মার্কিন কর্মীদের সুরক্ষার জন্য আঞ্চলিক ঘাঁটিগুলো থেকে সামরিক বাহিনীকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ১৯টি স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটিকে বহু আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞই স্থায়ী ঘাঁটি বলে মনে করেন। এগুলো হচ্ছে- সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ইসরায়েল, জর্ডান, কুয়েত, কাতার এবং সিরিয়ায় অবস্থিত।
স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর মতে, মার্কিন সামরিক বাহিনী জিবুতি এবং তুরস্কের বড় ঘাঁটিগুলোও ব্যবহার করে, যা অন্যান্য আঞ্চলিক কমান্ডের অংশ হলেও প্রায়ই মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অভিযানের সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
