যুব মহিলা লীগ নেত্রী লুনা হোসেন ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মানববন্ধন


যুব মহিলা লীগ নেত্রী লুনা হোসেন এবং তার স্বামী মকবুল হোসেন সর্দারের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে দোকান দখল করে রাখার অভিযোগে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ জাতীয় শিল্প সমবায় সমিতি লিমিটেড।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান লিপিকা দাস গুপ্তা। মানববন্ধন শেষে তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কাছে দোকান দখলমুক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় শিল্প সমবায় সমিতি একটি সরকারি ও সমবায়ী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যার ৮৭ শতাংশ মালিকানা সরকারের এবং ১৩ শতাংশ মালিকানা সমবায় সদস্যদের। এটি সমবায় অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত (নিবন্ধন নং-০১, তারিখ: ১২-০২-১৯৫৪)।
সমিতির দাবি, ঢাকা নিউ মার্কেটের ২৬১, ২৬২ ও ২৬৩ নম্বর দোকান ১৯৫৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক বরাদ্দপ্রাপ্ত। এই দোকানগুলো লুনা হোসেন এবং তার স্বামী মকবুল হোসেন সর্দার অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।
মানববন্ধনে লিপিকা দাস গুপ্তা অভিযোগ করেন, মকবুল হোসেন সর্দার একসময় সমিতির সভাপতি ছিলেন। সে সময়ে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০০৪ সালে নিজের স্ত্রী লুনা হোসেনের নামে দোকান ভাড়ার চুক্তি করেন, যার মেয়াদ ছিল ২০০৯ পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা দোকান ছাড়েননি। বরং, মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পুনরায় দোকান বরাদ্দের আবেদন করেন এবং বিনা জামানতে অবৈধ চুক্তি করার চেষ্টা চালান।
কার্যনির্বাহী কমিটি এই অনিয়মের বিরোধিতা করে চুক্তি নবায়ন না করে নোটিশ প্রদান করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, তারা চুক্তিনামা জাল করে দোকানগুলো জোরপূর্বক দখলে রেখে দেন।
লিপিকা দাস গুপ্তা বলেন, “তারা (লুনা ও মকবুল) জাল চুক্তিপত্র তৈরি করে একের পর এক মামলা করে আমাদের বিরুদ্ধে আইনি হয়রানি চালাচ্ছেন এবং দোকান দখল করে রেখেছেন।”
২০০৯ সাল থেকে শুরু করে একাধিক দেওয়ানি মামলা, আপিল এবং রিভিশন মামলায় লুনা হোসেন ও তার স্বামী পরাজিত হন। আদালত পর্যায়ক্রমে তাদের আনা সব মামলা খারিজ করে দেয়।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মার্চ মাসে তারা প্রথম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী দোকান রক্ষার জন্য পিটিশন দায়ের করেন। এরপর তারা চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দাবি করে দেওয়ানি মামলা করেন, যা একই বছরের জুনে খারিজ হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে তারা জেলা জজ আদালতে আপিল করে, যা ২০১৪ সালে পুনরায় খারিজ হয়।
এরপরও তারা বিষয়টি গোপন রেখে নতুন করে একই বিষয়ে একাধিক মামলা দায়ের করে, যার প্রতিটি আদালত কর্তৃক খারিজ হয়েছে। সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও ২০১৪ সালে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
এছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধমূলক মামলাও রয়েছে। ২০১৭ সালে দায়ের করা একটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় (মামলা নং-২৫১/২০১৭)।
২০২১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় শিল্প সমবায় সমিতি তাদের বিরুদ্ধে মানি স্যুটসহ আরও দুটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করে, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
লিপিকা দাস গুপ্তা বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং একটি সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য লড়াই করছি। বারবার আদালতের রায় আমাদের পক্ষে হলেও তারা জোরপূর্বক দোকান দখল করে রেখেছেন।”
এই বিষয়ে লুনা হোসেন কিংবা মকবুল হোসেন সর্দারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
