সাংবাদিকদের সুরক্ষায় টেকসই আইনি কাঠামো গঠনের দাবি


সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, হয়রানি ও মামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিক সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই আইনি সহায়তা কাঠামো গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তাদের মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখতে হলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। এজন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার, কার্যকর আইন এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে তারা এ আহ্বান জানান। 'সমষ্টি'র আয়োজনে এবং ইউনেস্কো গ্লোবাল মিডিয়া ডিফেন্স ফান্ড (জিএমডিএফ)-এর সহায়তায় এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্দেশ্য ছিল—সাংবাদিকদের জন্য একটি কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক আইনি সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা একটি ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হলেও দেশে এখনো সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য কোনো পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো গড়ে ওঠেনি। তারা আশা প্রকাশ করেন, চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে একটি কার্যকর কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হবে, যা ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, “সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ ও স্বাধীন পরিবেশ তৈরি এখন সময়ের দাবি। অতীতে সাংবাদিকদের দমন করে যে কালো আইন তৈরি হয়েছে, তা এখনো তাদের হয়রানির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পর গণমাধ্যমের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটলেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো দায়িত্বশীল উদ্যোগ দেখা যায়নি। বর্তমানে প্রায় ৩২টি আইন ব্যবহার করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “গত ১৫ বছরে দেশে ৬৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হয়নি। এমনকি বহুল আলোচিত সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও ঝুলে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনীতি, মালিকানার প্রভাব, প্রশাসনিক চাপ ও কালো টাকার হস্তক্ষেপ সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করায় বাধা সৃষ্টি করছে। অথচ তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো স্থায়ী আইনি সহায়তা কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি।”
সংলাপে জানানো হয়, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ‘সমষ্টি’ ইউনেস্কো জিএমডিএফ-এর সহায়তায় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার মূল লক্ষ্য সাংবাদিকদের জন্য টেকসই আইনি সহায়তা কাঠামো তৈরি করা। প্রকল্পের আওতায় সাংবাদিক সংগঠন ও আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেবল তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, আইনি তহবিল এবং কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থাও প্রয়োজন।
