শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
“শুধু ব্যবসা নয়, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলা একজন প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্ব।”

আহসান খান চৌধুরী: একজন সাহসী স্বপ্নদ্রষ্টার সাফল্যগাথা

আহসান খান চৌধুরী: একজন সাহসী স্বপ্নদ্রষ্টার সাফল্যগাথা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশের খাদ্য ও প্রকৌশল শিল্পে যদি কোনো নাম সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে উঠে আসে, তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে আহসান খান চৌধুরী। তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তাঁর কর্মদক্ষতা, নেতৃত্ব, এবং ভবিষ্যৎমুখী চিন্তাধারা আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

‍১৯৭০ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্ম নেন আহসান খান চৌধুরী। প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন ঢাকার সেন্ট জোসেফ হাই স্কুলে, এরপর নটর ডেম কলেজে। ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়ার ওয়ার্টবার্গ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষা শেষে পরিবারের শিল্প-উদ্যোগে সম্পৃক্ত হন।

তাঁর পিতা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরী ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও দূরদর্শী উদ্যোক্তা। যিনি ১৯৮০ সালে প্রাণ গ্রুপের সূচনা করেন। পিতার অকাল প্রয়াণের পর আহসান খান চৌধুরী ব্যবসার হাল ধরেন এবং প্রতিষ্ঠানটিকে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।

প্রাণ-আরএফএল এখন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ। ৪৯টির বেশি কোম্পানি, ১১০,০০০+ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান এবং ১.৫ কোটি পরোক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আহসান খান চৌধুরীর নেতৃত্বে গ্রুপটি বিস্তৃত হয়েছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত, খাদ্য, প্লাস্টিক, প্রকৌশল, ইলেকট্রনিকস এবং রিয়েল এস্টেটসহ বিভিন্ন খাতে।

তিনি বিশ্বাস করেন, “বাংলাদেশ একটি মানবসম্পদে সমৃদ্ধ দেশ। যদি দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঠিক সমন্বয় হয়, তাহলে আমরা বিশ্ববাজারেও নেতৃত্ব দিতে পারি।”

আহসান খান চৌধুরী মনে করেন, বাংলাদেশ শুধুমাত্র একটি কৃষিভিত্তিক দেশ নয়, বরং দ্রুত বাজারভিত্তিক ও শিল্পমুখী অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটেই তিনি তৈরি করেছেন একটি ব্যতিক্রমী বিতরণ ব্যবস্থা, যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রাণ পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য শুধু পণ্য বিক্রি নয়, বরং এমন একটি ইকোসিস্টেম তৈরি করা যেখানে গ্রামের মানুষও শিল্প উন্নয়নের অংশ হতে পারে।”

প্রাণ-আরএফএল বর্তমানে বিশ্বের ১৪১টির বেশি দেশে রপ্তানি করছে। তাঁর নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠানটি টানা ১৪ বছর ধরে সেরা রপ্তানিকারক ট্রফি অর্জন করেছে। গ্রুপের রপ্তানি কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকায়।

তিনি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভারত, নেপাল, ওমান, মালয়েশিয়া, দুবাই এবং স্পেনেও অফিস ও উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। এই উদ্যোগ প্রাণ-আরএফএলকে প্রথম বাংলাদেশি বহুজাতিক কর্পোরেশন হওয়ার পথে এগিয়ে নিচ্ছে।

আহসান খান চৌধুরীর দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যত নির্ভর। তাঁর বড় মেয়ে কানাডা থেকে পড়াশোনা শেষে ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছেন। ছোট মেয়েও পড়ালেখা শেষে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেওয়ার প্রস্তুতিতে আছে।

তাঁর স্ত্রী সীমা চৌধুরীও কোম্পানির পরিচালনা পর্যায়ে যুক্ত রয়েছেন। এটি শুধুমাত্র একটি পারিবারিক উত্তরাধিকার নয়, বরং একজন নেতা কিভাবে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করেন তার অন্যতম দৃষ্টান্ত।

প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করাই তাঁর রুটিন। তিনি কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন এবং সব বিভাগে ব্যক্তিগতভাবে নজর রাখেন।

তাঁর মতে, “একটি ব্র্যান্ড কেবল বিজ্ঞাপন দিয়ে বড় হয় না, এটি গড়ে ওঠে পরিশ্রম, সততা এবং গ্রাহকের আস্থার ভিত্তিতে।”

তাঁর নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে: প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেড, আরএফএল প্লাস্টিকস লিমিটেড, চোরকা ফ্যাশনস লিমিটেড, গেটওয়েল লিমিটেড, হবিগঞ্জ সিরামিকস ও গ্লাসওয়্যার, সান বেসিক কেমিক্যালস লিমিটেড ইত্যাদি সহ প্রায় ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান।

এছাড়াও তিনি মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড-এর স্পনসর ডিরেক্টর এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

তাঁর নেতৃত্বে AMCL-PRAN কোম্পানি পেয়েছে: “আইসিএসবি জাতীয় কর্পোরেট গভর্ন্যান্স পুরস্কার ২০১৪ (রৌপ্য)”, বহুবারের জন্য “সেরা রপ্তানিকারক ট্রফি”, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনগুলোতে বিশেষ স্বীকৃতি।

তাঁর বর্তমান লক্ষ্য একটি সম্পূর্ণ বহুজাতিক শিল্প গ্রুপ গঠন, যা দেশ ও দেশের বাইরে একযোগে উৎপাদন, বিপণন ও রপ্তানিতে নেতৃত্ব দেবে। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ভারত, নেপালসহ কয়েকটি দেশে উৎপাদন কেন্দ্র চালু হয়েছে।

আহসান খান চৌধুরী বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। তিনি শিখিয়েছেন, দেশীয় পণ্য দিয়েও বৈশ্বিক ব্র্যান্ড গড়া সম্ভব যদি থাকে পরিকল্পনা, নিষ্ঠা এবং নেতৃত্বের সাহস।

বাংলাদেশের ব্যবসা জগতে তাঁর অবদান একদিন শুধু শিল্পপতি হিসেবেই নয়, বরং একজন জাতীয় সম্পদ হিসেবেও বিবেচিত হবে।

“এমন একজন উদ্যোক্তা যিনি দেশকে শুধু ভালোবাসেন না, বরং দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চুপিসারে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে সম্মান জানানো আমাদের দায়িত্ব।”


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন