চিরবিদায়ে ভাওয়াইয়ার সুর, আব্বাসীর কবরফলকে বাবার গানের পঙক্তি


ভাওয়াইয়া গানের কিংবদন্তি শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী আজ (১০ মে ২০২৫) শনিবার দুপুরে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। তার কবরফলকে খোদাই করা হয়েছে পিতার বিখ্যাত গান “কি ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে”। এর আগে গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কুচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। তিনি ছিলেন পল্লীগীতির সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদের কনিষ্ঠপুত্র। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কলকাতায়, পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী—গায়ক, সঙ্গীত গবেষক, লেখক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ৫০টিরও বেশি বই রচনা করেছেন, যার মধ্যে ভাওয়াইয়া গানের ওপর দুটি বইয়ে প্রায় ১,২০০ গানের সুর ও লিপি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান “আমার ঠিকানা”, “ভরা নদীর বাঁকে” ও “আপন ভুবন”-এর উপস্থাপক ছিলেন।
১৯৯৫ সালে একুশে পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তার মৃত্যু সংগীতাঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের লোকসংগীতের এক অমূল্য রত্ন।
শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সংগ্রহে কয়েক হাজার লোকগান রয়েছে। তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, নজরুলগীতি পরিবেশন করে এদেশের সংগীতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ইউনেসকোর বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি, নজরুল ও আব্বাসউদ্দীনের ইংরেজি জীবনী লেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত গবেষক।
শুধু সংগীতচর্চা ও লেখালেখিতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমাজসেবায়ও সক্রিয় ছিলেন আব্বাসী। রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে অনেক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বরেণ্য এই শিল্পী। সংগীত ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য একুশে পদকসহ দেশ-বিদেশে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’, ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’।
