বলিউড সিনেমা থেকে বাদ পড়লেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী


ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে, ভারতের সামরিক অভিযান 'অপারেশন সিন্ধুর' বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করেছিলেন পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাওরা হোসেন।
এরপর, ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক অভিষেক জওকার তাঁর 'নট আ প্রস্টিটিউট' সিনেমায় মাওরাকে কাস্ট করার পরিকল্পনা বাতিল করেন। তিনি জানান, "আমি পাকিস্তানি অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করতে চাই না, কারণ আমি আমার দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানাতে চাই" ।
এছাড়া, পাকিস্তানি অভিনেত্রী হানিয়া আমিরকেও 'সরদার জি ৩' সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এবং ফাওয়াদ খানের 'আবির গুলাল' সিনেমার মুক্তি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি (FWICE) এবং অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন (AICWA) পাকিস্তানি শিল্পীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে, যা ২০১৬ সালের উরি হামলা ও ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরও কার্যকর ছিল ।
পাকিস্তানের বেশকিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী কাজ করেন বলিউডে। বলা যায়, তাদের ক্যারিয়ারই এখন বলিউডে। কিন্তু দেশের এই ঘোর বিপদে তারা ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে পাশে দাঁড়িয়েছেন নিজ দেশের।
এতে করে বলিউডে কাজ করার সুযোগ প্রায় হারাতে বসেছেন তারা। এই যেমন ‘সনম তেরি কসম’ সিনেমার পাকিস্তানি অভিনেত্রী মাওরা হোসেন সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তি থেকে বাদ পরেছেন।
এই অভিনেত্রী পাকিস্তানে চালানো ভারতের হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে করে ‘সনম তেরি কসম’ সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করা অভিনেতা হর্ষবর্ধন রানে এই অভিনেত্রীর সঙ্গে এই সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তিতে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছেন।
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া রোমান্টিক বলিউড সিনেমা ‘সনম তেরি কসম’ বক্স অফিসে রেকর্ড তৈরি করেছিল। ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ‘সনম তেরি কসম ২’-এর। যথারীতি পাকিস্থানি অভিনেত্রী মাওরাকে নিয়েই সিনেমার শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মাওরার বিরূপ মন্তব্যের পর তার সঙ্গে অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানান হর্ষবর্ধন।
অন্যদিকে অভিনেতার এই সরে আসাকে মাওরা উল্লেখ্য করেছেন ‘জনসংযোগ স্টান্ট’ বলে।
তিনি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘জনসংযোগ কৌশল এটি! এটা আমি আগেই ধারণা করেছিলাম। তিনি গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন একটি জনসংযোগ কৌশল নিয়ে... যখন আমাদের দেশগুলি যুদ্ধে লিপ্ত, তখন আপনি এই কী নিয়ে কথা বলতে এসেছেন? মনোযোগ আকর্ষণের জন্য একটি জনসংযোগ বিবৃতি? কী দুঃখের বিষয়!’
এদিকে হর্ষবর্ধন একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অভিনেত্রীর প্রতি পাল্টা আক্রমণ করেছেন।
মাওরার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হর্ষবর্ধন রানে লিখেছেন, ‘এটা ব্যক্তিগত আক্রমণের চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। সৌভাগ্যবশত, এই ধরনের প্রচেষ্টা উপেক্ষা করার সহনশীলতা আমার আছে। কিন্তু আমার জাতির মর্যাদার ওপর যেকোনো আক্রমণের জন্য কোনো সহনশীলতা দেখাবো না আমি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘একজন ভারতীয় কৃষক তার ফসল থেকে অবাঞ্ছিত আগাছা তুলে ফেলবে। একে আগাছা বলা হয়। এই কাজের জন্য কৃষকের কোনও জনসংযোগ দলের প্রয়োজন নেই। এটিকে সাধারণ জ্ঞান বলা হয়। আমি কেবল দ্বিতীয় কিস্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি। আমার দেশের কর্মকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে চিহ্নিত করে, এমন ব্যক্তিদের সাথে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে।’
এরপর এই অভিনেতা লিখেছেন, ‘তার বক্তৃতায় এত ঘৃণা, এত ব্যক্তিগত আক্রমণ। আমি কখনও তার নাম উল্লেখ করিনি। একজন নারী হিসেবে তার মর্যাদার উপর আক্রমণ করিনি। আমি সেই মান বজায় রাখতে চাই।’
বলা প্রয়োজন, এরইমধ্যে পাকিস্তানি শিল্পীদের নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে ভারতজুড়ে।
