জুলাই আন্দোলনকারীরা প্রত্যেকে একেকজন নজরুলে পরিণত হয়েছিল: আবদুল হাই শিকদার


বিশিষ্ট কবি, প্রাবন্ধিক ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, বিপ্লব ও মুক্তির পক্ষে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কবিতাগুলো নজরুলের লেখা। আমাদের জুলাই আন্দোলনে শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক মূল কণ্ঠস্বর ছিল নজরুল। আমাদের ছেলেমেয়েদের কে উদ্বুদ্ধ করেছে তা গ্রাফিতিগুলো দেখলেই বোঝা যায়। নজরুল জুলাই আন্দোলনে কী ভূমিকা পালন করেছে তা বোঝার জন্য জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যের প্রয়োজন নেই, রাস্তার গ্রাফিতিগুলো দেখুন, ছেলেমেয়েদের মুখের দিকে তাকান, প্রত্যেকে একেকটা নজরুলে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
বুধবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল জয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল হাই শিকদার বলেন, সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নজরুল আমাদের প্রধান অস্ত্র। আমরা যখন মানব মিলনের কথা বলবো, মানুষে-মানুষে ভেদাভেদহীন সমাজের কথা বলবো, সব ধর্মের মানুষ মিলেমিশে এক সমাজের মধ্যে থাকার চেষ্টা করবো, তখন নজরুলের সাম্যবাদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এত অসাধারণ অসাম্প্রদায়িকতা আমরা আর কারো মাঝে দেখি না।
নজরুল ও বাংলাদেশ অবিভাজ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি জাতির বেঁচে থাকার জন্য যতগুলো উপকরণ দরকার বাংলা সাহিত্যে নজরুল ছাড়া আর কারো সাহিত্যে সবগুলো একসঙ্গে পাওয়া যায় না। এই জন্য বলা হয় বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও কাজী নজরুল ইসলাম এক এবং অবিভাজ্য সত্তা। দুধের সঙ্গে সাদা রঙের যে সম্পর্ক, দেহের সঙ্গে রুহের যে সম্পর্ক, বাংলাদেশের সঙ্গে নজরুলের সেরকম সম্পর্ক। এখানে একটা থেকে আরেকটাকে আলাদা করলে দুটোই অকার্যকর হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, অন্য অনেক কিছু ছাড়া আমাদের চললেও নজরুলকে ছাড়া আমাদের চলে না। নজরুলের চর্চা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মানব মুক্তির যুদ্ধ অর্থহীন হবে, শোষণের বিরুদ্ধে আমাদের যে সংগ্রাম ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সমৃদ্ধ পৃথিবীর যে চিন্তা তা অর্থহীন হবে। কল্যাণ ও মানবিক রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন আমরা দেখি তা-ও অর্থহীন হবে। আমরা যদি নারী মুক্তির কথা বলি তাহলে সেটিও নজরুলকে ছাড়া অর্থহীন হবে।
আবদুল হাই শিকদার আরও বলেন, নজরুলের জন্ম নাহলে বাংলা ভাষার তেজোদ্দীপ্ত লাভা, আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরণ ও উত্তাল প্রবাহ সম্পর্কে জানতে পারতাম না। ভাষার স্পিরিট জানা যেত না। প্রেমের সঙ্গে প্রকৃতি, বিপ্লবের সঙ্গে বিজ্ঞানসহ ভাষার অসাধারণ রসায়ন জানতে পেরেছি নজরুলের মাধ্যমে। নজরুল নাহলে কী করে জানতাম, ‘লাথি মার ভাঙরে তালা, যতসব বন্দিশালা’? জনগণের এই ভাষাই ধারণ করেছেন নজরুল। তার সাহিত্য শুধু স্লোগান জোগায় না, অন্তরের রসবোধও অন্বেষণ করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, কবি নজরুল তার সাহিত্যের ভাববস্তুতে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছিলেন। যেখানে প্রপঞ্চ হিসেবে আত্মশক্তি’ ছিল ভিত্তিভূমি। তিনি সবসময়ই মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলেন এবং বাঙালি বারবার নজরুল দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছে। তিনি এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বেলা ১১টায় এ সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনজুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাংগীর আলম। বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সেমিনার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কবি আবদুল হাই শিকদার।
নাজমুল হুসাইন, ইবি প্রতিনিধি
