লোকসংগীতের কিংবদন্তির বাসায় চুরি, স্বাধীনতা ও একুশে পদক লুট


শিল্পী আবদুল আলীমের কণ্ঠ বাংলার লোকগানের অমর সৃষ্টি হয়ে ওঠে। তার গানে মিশে ছিল জীবন ও প্রকৃতির এক অদ্ভুত রকমের সুর, যা দর্শকদের মনে চিরকাল ধরে থাকে। তিনি সংগীত জগতে তার অসাধারণ অবদানের জন্য পেয়েছেন নানা জাতীয় সম্মান, যার মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল স্বাধীনতা পুরস্কার এবং একুশে পদক।
একটি দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক ঘটনায় হারিয়ে গেছে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি পদক ও স্মারক। এর মধ্যে রয়েছে দুটি মূল্যবান পুরস্কার, যেগুলো আব্দুল আলীমের অর্জনের স্মারক হিসেবে ছিল সংরক্ষিত।
ঘটনাটি ঘটে গত ৮ মে, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আব্দুল আলীমের মেজো মেয়ে আসিয়া আলীম নিয়মিত হাঁটতে বের হন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখেন, বাসার দরজার তালা ভাঙা, ভেতরে সবকিছু অগোছালো—চুরি হয়ে গেছে বহু মূল্যবান স্মৃতি ও সম্মান।
দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও উদ্ধার হয়নি সেই গুরুত্বপূর্ণ পদক ও স্মারকগুলো। পরিবার এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষজন বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পদকগুলোর ঐতিহাসিক ও ব্যক্তিগত মূল্য অনেক, যা অর্থমূল্যে পরিমাপযোগ্য নয়।
আব্দুল আলীমের পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করছেন যে চুরির পেছনে পরিবারের ভেতরের কেউ জড়িত থাকতে পারে। আসিয়া আলীম জানান, “যদি ভেতরের কেউ তথ্য না দিত, তবে বাইরের লোকদের পক্ষে এসব মূল্যবান জিনিসের অবস্থান জানার কথা নয়।”
আব্দুল আলীমের বড় ছেলে, জহির আলীম বলেন, “বাসায় গ্যাস এবং পানির বিল হিসেবে রাখা ১০ হাজার টাকা চোররা নেয়নি, তবে তাদের মূল লক্ষ্য ছিল বাবার মূল্যবান পদক ও স্বর্ণালঙ্কার।” এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, পদকগুলো উদ্ধারের জন্য তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। উপদেষ্টা তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আব্দুল আলীমের কন্যা নুরজাহান আলীম জানান, চুরি হওয়া জিনিসগুলোর মধ্যে ছিল ১৯৭৭ সালের একুশে পদক, ১৯৯৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার, ১৯৬০ সালে পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত তমঘা-ই-হুসন এবং লাহোরে নিখিল পাকিস্তান সংগীত সম্মেলনে পাওয়া দুটি সম্মাননা স্মারক। এছাড়া চুরি হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, একটি স্বর্ণের কানের দুল ও একটি গলার হার।
এ ব্যাপারে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারা স্বর্ণালঙ্কার বা টাকাপয়সা হারানোর কারণে কষ্ট পাচ্ছেন না, তবে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রদ্ধেয় লোকগানের শিল্পী আব্দুল আলীমের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাগুলোর চুরি হয়ে যাওয়াটা অপূরণীয় ক্ষতি।
খিলগাঁও থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, “বাড়ির আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পাঁচজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে, তবে তাদের মুখ স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে না।” ওসি দাউদ হোসেন জানিয়েছেন, “পদক চুরির ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়েছে। চোর শনাক্ত করার জন্য তৎপরভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।”
