শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা, সহকারী অধ্যাপক নাদিরাকে বদলি

শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা, সহকারী অধ্যাপক নাদিরাকে বদলি
শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি প্রদান
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

নরসিংদী সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও নারী অধিকারকর্মী নাদিরা ইয়াসমিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলির সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তারা নাদিরা ইয়াসমিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে দেখতে চান না।

সম্প্রতি ‌‘হিস্যা’ ম্যাগাজিনে একটি লেখাকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম নাদিরা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ হানার অভিযোগ তোলে এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে অপসারণের আলটিমেটাম দেয়। এ চাপের পরিপ্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)  সোমবার এক প্রজ্ঞাপনে ইয়াসমিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলির আদেশ দেয়।

সাতক্ষীরার শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এ বদলির সিদ্ধান্ত ‘জনমতের প্রতিফলন নয়, বরং চাপের কাছে নতি স্বীকার’। ফেসবুকে কেউ কেউ নাদিরা ইয়াসমিনকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাঁর সাতক্ষীরায় যোগদান রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এক শিক্ষার্থী লেখেন, এ নাস্তিককে আমি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে আমার বাংলা ডিপার্টমেন্টে দেখতে চাই না। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য সকলকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

আরেকজন লেখেন, তাকে যদি বাংলা ডিপার্টমেন্টে বসার সুযোগ করে দেয়া হয়, তাহলে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা আঙ্গুল বাঁকা করে কীভাবে বের করে দিতে হয়? সেটা কড়ায় গন্ডায় বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত।

এ ঘটনায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষকরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। 

এদিকে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আল মুস্তানছির বিল্লাহ’র কাছে মঙ্গলবার (২৭ মে) দুপুর ১২টা দিকে প্রথম দফায় স্মারকলিপি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বেলা সাড়ে ১২টা দিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পালের হাতে দ্বিতীয় দফায় স্মারকলিপিটি দেয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবিগুলো হলো—নাদিরা ইয়াসমিনকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে যোগদান করতে না দেয়া, তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে ইসলাম বিদ্বেষী কাউকে সাতক্ষীরার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বদলি করা।

প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন গণিত বিভাগের বখতিয়ার হোসেন ও রবিউল ইসলাম, প্রাণীবিদ্যার ফাহমিদ আলম ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, অর্থনীতির ঝুমা মারিয়াম, উদ্ভিদবিদ্যার ইমরান নাজির শুভ এবং বাংলা বিভাগের শাওন হোসেন।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাশেম হজ্জব্রত পালনের জন্য বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। 

 ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আল মুস্তানছির বিল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। 

তিনি আরও বলেন, সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিনকে যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে সেকারণে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও বিধি মোতাবেক সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন যোগদান করতে পারেন। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কলেজের পক্ষ থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল শিক্ষার্থীদের জানান, যেহেতু বদলির সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসেছে, তাই স্মারকলিপিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত সেখান থেকে জানানো হবে।

এদিকে, সাতক্ষীরায় প্রেরণা নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী প্রধান শম্পা গোস্বামী তার ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেছেন—"আসেন নাদিরা আপা। মুক্তিযুদ্ধ কোটা বাদ দিলাম, নারী কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, বেছে বেছে আপনাকে পারফেক্ট জেলাতে পাঠিয়েছে। সমান অধিকার নিয়ে এখানে একসাথে কাজ করবো, এবার আপনার আরও ভালো লাগবে। সাতক্ষীরায় আপনাকে স্বাগতম আপা।"
 


এসএম শহীদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি 
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন