শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

অমর হয়ে থাকা এক প্রতিভা: হুমায়ুন ফরীদি

অমর হয়ে থাকা এক প্রতিভা: হুমায়ুন ফরীদি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি জন্মেছিলেন ১৯৫২ সালের ২৯ মে, ঢাকার পুরান ঢাকার নারিন্দায়। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—তিন ক্ষেত্রেই ছিলেন সমান দক্ষ, প্রভাবশালী ও জনপ্রিয়। প্রতিটি চরিত্রে নিজের অভিনয়শৈলী দিয়ে যেভাবে প্রাণ সঞ্চার করতেন, তাতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দর্শকের হৃদয়ের স্থায়ী আসনের মালিক।

হুমায়ুন ফরীদির অসাধারণ সব চরিত্র আজও দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে। কেবল একজন অভিনেতা নয়, তিনি ছিলেন এক অনন্য প্রতিভা, যিনি শিল্পের গণ্ডিকে বারবার ভেঙেছেন নিজের মতো করে।

আজ বেঁচে থাকলে তিনি ৭৪ বছরে পা রাখতেন। কিন্তু শিল্পমাধ্যমে তার অবদান অমলিন, জীবনের অনেক গুণী শিল্পী হারিয়ে গেলেও হুমায়ুন ফরীদি রয়েছেন আমাদের স্মৃতিতে, পর্দায়—অমর হয়ে।


ঢাকায় জন্ম হলেও কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির শৈশব-কৈশোর কেটেছে দেশের নানা প্রান্তে। তার বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে ঘুরেছেন মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ অনেক জেলায়। ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাজীবন কেটেছে বিভিন্ন জেলার নানা স্কুলে।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে এইচএসসি পাস করার পর, স্বাধীনতার পরপরই ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে। সেখানে অনার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেই নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। ১৯৭৬ সালে সেলিম আল দীনের উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগরে আয়োজিত এক নাট্যোৎসবে ফরীদি নিজে লেখা ও নির্দেশিত ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নাটক মঞ্চস্থ করেন, যা সে সময় সেরা নাটক হিসেবে বিবেচিত হয়।

এরপর শুরু হয় তার অভিনয়-অধ্যায়—যেটি শুধু শুরুই নয়, হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র—তিন মাধ্যমেই সমান দক্ষতা ও আধিপত্য রেখে কাজ করেছেন ফরীদি। তিন দশকের বর্ণিল ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র।

২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ সিনেমায় অনবদ্য অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

ব্যক্তিজীবনে হুমায়ুন ফরীদি প্রথমে বিয়ে করেন ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে। তাদের সংসারে দেবযানি নামে এক কন্যা রয়েছে। পরে তিনি বিয়ে করেন বিখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে, যদিও সেই সম্পর্ক ২০০৮ সালে বিচ্ছেদে গড়ায়।

তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে—‘সন্ত্রাস’, ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’। শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে (মরণোত্তর) একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।

২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, বাংলা অভিনয় অঙ্গনের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নেন। কিন্তু তার সৃষ্টি, সংলাপ আর রূপায়ণ আজও ছুঁয়ে যায় অসংখ্য হৃদয়কে—যেন তিনি আছেন, থাকবেনই।


 


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন