বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারিরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামারিরা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ঈদুল আজহা সামনে রেখে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কামারপট্টিতে চলছে ব্যস্ত সময়। বাজারটিতে ছুরি, চাপাতি, দা, বটি ও কুড়াল তৈরির ও শান দেয়ার কাজে নিয়োজিত কামারদের দোকানগুলো এখন দিনরাত সরগরম।

পাড়ার এক কোণে কামার দোকানগুলোর সামনে গেলেই শোনা যাচ্ছে টুং টাং শব্দ—হাতুড়ির আঘাতে গরম লোহা পেটানোর দৃশ্য যেন চোখে ভাসে। কিছু দোকানে চলছে ছুরি-বটির শান দেয়ার কাজ। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য ক্রেতা।

ব্যস্ততার ভিড়ে কামারিরা : 

কাওরান বাজারের কামার দোকানগুলো এখন যেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করছে। প্রতিদিন অগ্রিম অর্ডার নেয়া হচ্ছে, পাশাপাশি দোকানের সামনে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা আকারের ছুরি-চাপাতি ও বটি। একদিকে নতুন পণ্যের বিক্রি, অন্যদিকে পুরোনো দা-বটি শান দিতে আসছেন গ্রাহকরা।

খিলগাঁও, মহাখালী, মুহাম্মদপুরসহ রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও একই চিত্র। দোকানের সামনেই সারি করে সাজানো দা, বটি, ছুরি, চাপাতি—ক্রেতারা পছন্দমতো কিনে নিচ্ছেন কোরবানির প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।

দামের হালচাল: 

কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়। চাপাতি প্রতিটি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০, ৬০, ৮০, ১২০ ও ১৫০ টাকায়। চাকু পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। দা-বটির দাম ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে।

এক ব্যবসায়ী জানান, স্প্রিং ও জাহাজ ভাঙা লোহা ব্যবহার করে এসব ছুরি-চাপাতি ও বটি তৈরি করা হয়। স্প্রিংয়ের তৈরি জিনিসের দাম তুলনামূলক বেশি। যেমন: এক কেজি ওজনের চাপাতি ৭০০ টাকা, স্প্রিংয়ের হলে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দাম রাখা হয়। গরু জবাইয়ের বড় ছুরি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায়।

বিক্রিতে মন্দাভাব, শঙ্কায় কামাররা: 

দোকানিরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির পর বিদেশি সরঞ্জামের জনপ্রিয়তা ও অর্থনৈতিক চাপের কারণে তাদের ব্যবসা আগের মতো নেই। এ বছর দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কোরবানির সংখ্যা কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা, যার প্রভাব পড়বে তাদের বিক্রিত পণ্যের ওপর।

কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, “সারা বছর আমরা দা, বটি, কোদাল বানালেও ঈদের সময় ছুরি-চাকুর চাহিদা বেশি থাকে। তবে এখনো ঢাকার বাইরের পাইকার কাস্টমাররা তেমন আসেননি।”

আরেক দোকানদার মো. লতিফ মিয়া বলেন, “গতবার অনেক ছুরি-চাপাতি বিক্রি করতে পেরেছিলাম। ময়মনসিংহ, সিলেট, কুষ্টিয়া, ভোলা থেকে পাইকাররা আসতেন। এবার এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো না, মানুষের হাতে টাকা নেই। তবে আশা করছি দু-একদিন পর হয়তো বেচাকেনা বাড়বে।”

ভরসা এখন শেষ মুহূর্তের বিক্রিতে:

অনেকেই পুরোনো দা-বটি শান করাতে কামার দোকানে আসছেন। যেমন নুরু মিয়া নামে এক ক্রেতা জানান, “নিজের ঘরের জিনিসপত্র আছে, তাই শুধু শান দিতে এসেছি। দাম খুব একটা বাড়েনি। আগের মতোই টাকা নিচ্ছে।”

সব মিলিয়ে কোরবানির ঈদের আগে কামারপট্টিগুলোয় ব্যস্ততা থাকলেও ব্যবসার পরিমাণ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। কামাররা এখন তাকিয়ে আছেন শেষ মুহূর্তের বিক্রির দিকেই।


নতুন কাগজ/বিএইচ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন