শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর ঢাকা সফর: বিনিয়োগ খরার মাঝে নতুন সম্ভাবনার বার্তা

চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর ঢাকা সফর: বিনিয়োগ খরার মাঝে নতুন সম্ভাবনার বার্তা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না আসা। এমন প্রেক্ষাপটে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও’র ঢাকা সফর সরকারকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

শনিবার বিশাল ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকা আসছেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদলের সফর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আশা করছে, সফরে বেশ কিছু বিনিয়োগের ঘোষণা আসবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি সরকারকে স্বস্তি দিলেও গ্যাস সংকট, করজটিলতা, আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মতো বিষয়গুলো চীনা বিনিয়োগ বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে যাবে। এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

চীনা প্রতিনিধিদলের ২০০ সদস্য শনিবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তারা বিকেলে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। রোববার ৫টি সেশনে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ম্যাচমেকিং’ সভায় অংশ নেবেন তারা। একই দিন গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানা পরিদর্শনেরও পরিকল্পনা রয়েছে।

২ জুন অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-চীন যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং চীনের পক্ষে ওয়াং ওয়েনতাও।

চীনা মন্ত্রীর সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহজীকরণ ও আমদানি-রপ্তানিতে বাধা দূর করতে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানিয়েছে, সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিদেশি বিনিয়োগে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে চীনা কোম্পানিগুলো চট্টগ্রাম ও মোংলায় পরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বৈদ্যুতিক যান, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি, বায়ু ও সৌর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) নিট বিদেশি বিনিয়োগ ৮৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ কম।

অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবির বলেন, “বর্তমানে বিনিয়োগ পরিস্থিতি হতাশাজনক। গ্যাস সরবরাহ অপ্রতুল, প্রক্রিয়াগত জটিলতা এবং উচ্চ খরচ বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে। পরিস্থিতি উন্নত না হলে বিদেশি বিনিয়োগ আসা কঠিন।”

তিনি আরও বলেন, “চীন যদি বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে, তা সরকারের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন হবে। তবে একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। চীন-মার্কিন প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে কোনো ধরনের টানাপড়েন এড়াতে হবে।”

সম্প্রতি ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার এবং পোশাক ও সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা তার প্রমাণ। এ পরিস্থিতিতে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর করা বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ হলেও, সুনির্দিষ্ট কৌশল ছাড়া তা ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন