মেজর সিনহা ছিলেন প্রতিরোধের প্রতীক, হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত: অ্যাটর্নি জেনারেল


সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডকে ‘ঠান্ডা মাথায় পূর্বপরিকল্পিত হত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, মেজর সিনহা নিজের জীবন দিয়ে ভবিষ্যতে অনেক নিরীহ মানুষের প্রাণ রক্ষা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এবং আদালতে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন। তিনি জানান, এই মামলার আসল গুরুত্ব আসামিদের পরিচয়ে নয়, বরং মুখ্য বিষয় হলো নিহত ব্যক্তি, মেজর সিনহা।
তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, এটি আত্মরক্ষার কোনো ঘটনা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মেজর সিনহা নিরস্ত্র অবস্থায় দুই হাত তুলে গাড়ি থেকে নামেন, অথচ তারপরও তাকে গুলি করা হয় এবং মৃত্যুনিশ্চিত করতে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরা হয়। এটিকে আত্মরক্ষার ঘটনা হিসেবে দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
আসামিপক্ষের আত্মরক্ষার যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আইনে আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও তার একটি সীমা আছে—প্রোপোরশনালিটি। একজন লাঠি নিয়ে এলে তাকে গুলি করে মারা যাবে না। আর এই মামলায় আসামিরা তাদের দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য বা পরিস্থিতিগত প্রমাণ দিতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় ‘বিয়ন্ড অল রিজনেবল ডাউট’ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং আসামিরা প্রত্যেকে এর সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
একসময় পুলিশের সাক্ষ্যকে অবিশ্বাস করা হতো, কিন্তু এখন সেই অবস্থান বদলেছে। সাক্ষ্যকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে আসামিপক্ষকেই, বলেন তিনি।
মেজর সিনহার মৃত্যুকে "পাহাড়ের মতো ভারী" আখ্যা দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটি পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছে। এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। আবরার ফাহাদ যেমন নিজের মৃত্যুতে অনেক তরুণের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, তেমনি মেজর সিনহার মৃত্যুও অনেক নিরীহ মানুষকে ভবিষ্যতের ‘প্রদীপদের’ হাত থেকে রক্ষা করেছে।
ক্রসফায়ারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এটি কোনো গুলি বিনিময়ের ঘটনা ছিল না, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যা। এমন ঘটনা বন্ধ করতে হলে এর বিচার অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
শেষে তিনি বলেন, আমরা চাই, একটি এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে, যা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের স্বপ্নের মতো— আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য, ন্যায়ের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
