২০তম বর্ষে পদার্পণ করলো কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়


প্রতিষ্ঠার ২০তম বর্ষে পদার্পণ করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ময়মনসিংহের ত্রিশালের শান্ত, সবুজ পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্রোহ, সাম্য ও মানবতার চেতনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
২০০৫ সালের ১ মার্চ ত্রিশালের নামাপাড়ায় নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত বটতলায় স্থাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর। পরের বছর, ২০০৬ সালের ৯ মে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরের ১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালের ৩ জুন, যেটিকে এখন ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
প্রথম বর্ষে চারটি বিভাগ চালু হয়, বাংলা, ইংরেজি, সংগীত এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগ চালু রয়েছে। আছে একটি ইনস্টিটিউট, ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ। এখানে শিক্ষক রয়েছেন ২১০ জনের বেশি, কর্মকর্তা ১৬১ জন এবং কর্মচারী ১৯১ জন। বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন এই প্রতিষ্ঠানে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ একরের ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে একাধিক একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় মসজিদ, টিএসসি ও একটি দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক। চারটি আবাসিক হল, অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, বিদ্রোহী ও শিউলিমালা। যেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থীর আবাসস্থল। নির্মাণাধীন রয়েছে আরও দুটি নতুন হল। নিরাপত্তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা ও ওয়াকিটকিসংবলিত ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে নজরুলের কাব্যিক নামকরণ লক্ষ করা যায়। ‘চির উন্নত মম শির’ স্মৃতিসৌধ, ‘চক্রবাক’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’ ক্যাফেটেরিয়া, ‘ধূমকেতু’ ও ‘বিদ্রোহী’ বাস, ‘চুরুলিয়া মঞ্চ’, ‘গাহি সাম্যের গান মঞ্চ’ কিংবা চিকিৎসাকেন্দ্রের নাম ‘ব্যথার দান’, সবখানেই নজরুলের প্রভাব রয়েছে।
প্রশাসনিক কাজেও এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। চালু হয়েছে ডিজিটাল ফাইলিং, সেশনজটমুক্ত একাডেমিক ক্যালেন্ডার, এবং স্মার্ট ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। নজরুল স্টাডিজ ইনস্টিটিউট এবং বাধ্যতামূলক নজরুল স্টাডিজ কোর্স নজরুলচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আয়োজনেও এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মিত। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় নজরুলজয়ন্তী, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নাট্যোৎসব, চলচ্চিত্র উৎসব, গবেষণা মেলা, আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও শীতকালীন পিঠা উৎসব।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নজরুলের আদর্শকে ধারণ করে এই বিদ্যাপীঠ ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
