শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

আর্থিক খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে : বাজেট উপস্থাপনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন

আর্থিক খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে : বাজেট উপস্থাপনায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশের আর্থিক খাত আজ চরম সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার ভাষ্য, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, অপশাসন ও লাগামহীন দুর্নীতির ফলে দেশের আর্থিক খাত ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গেছে।

সোমবার (২ জুন) বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভি ও বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে একযোগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি। এটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। এর আগে ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম একইভাবে বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন।

বাজেট বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, “বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। বহু ঋণ খেলাপি বারবার পুনঃতফসিল করে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হয়েছে। তবে বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিং পদ্ধতি চালু করায় প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে।”

তিনি জানান, ২০২৩ সালের জুন মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশে—অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “৫ আগস্ট ২০২৪-এর রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সরকার ব্যাংকিং খাতের কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, তারল্য সংকট ও দেউলিয়াত্ব প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যেগুলোর মূল দায়িত্ব—
১. ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই ও ঝুঁকি নিরূপণ,
২. বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কার্যকর তদারকি নিশ্চিত করা,
৩. দেশে ও বিদেশে চুরি/পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত ও পুনরুদ্ধার।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমানো হলো।

সংসদ না থাকায় এবারের বাজেট নিয়ে কোনো সংসদীয় বিতর্ক হবে না। তবে বাজেট ঘোষণার পর জনমত নেওয়া হবে এবং সে মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত বাজেট প্রণয়ন করা হবে।

চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাজেটটি উপস্থাপন করা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে। সেখানে অনুমোদন পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাজেট কার্যকর করবেন, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন