কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, জনস্বাস্থ্য ও মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সংকোচনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমিয়ে ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ও সংসদহীন বাস্তবতায় এবারের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বিটিভির মাধ্যমে উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাজেটের আকার: ৭,৮৯,৯৯৯ কোটি টাকা
বাজেট ঘাটতি: ২,৬৬,০০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৩.৬%)
জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা: ৫.৬%
মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা: ৬.৫%
এডিপি বরাদ্দ: ২,৩০,০০০ কোটি টাকা
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা: ৪,৯৯,০০০ কোটি টাকা
ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ: ১,১৩,৫০০ কোটি টাকা
২০২৫–২৬ অর্থবছরে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৯,৬২০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১,৩৬১ কোটি টাকা বেশি।
প্রধান উদ্যোগসমূহ: কৃষিপণ্যের অপচয় রোধে কোল্ড চেইন ও হিমাগার উন্নয়ন, সাপ্লাই চেইনে অংশীজনদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ডেটাবেইজ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, চা বাগান শ্রমিকদের ১৯ টাকায় গম বিতরণ, ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০.৪ লাখ নারীর জন্য ৩০ কেজি চাল।
মৎস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা: ৫২.৫৫ লাখ মেট্রিক টন। স্বাস্থ্য খাত ও জনস্বাস্থ্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ: ৪১,৯০৮ কোটি টাকা। দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা: ৪,১৬৬ কোটি টাকা। টিকাদান কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ: ১,০০০ কোটি টাকা।
চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট নিয়োগ ত্বরান্বিত করা হবে, নার্সিং শিক্ষায় পিএইচডি চালু এবং আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা।
কৃষি থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে। তামাকবীজ আমদানিতে ২৫% কাস্টমস ডিউটি।
উৎপাদনকারীদের জন্য কাঁচামাল (যেমন পেপার) আমদানিতে ১০০% সম্পূরক শুল্ক।
বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য শুল্ক ৩৫০% পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।
সিগারেট, গুল ও জর্দার দাম বাড়বে। দাম বাড়তে পারে আরো যেসব পণ্যের, মুঠোফোন – ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কিছুটা কমানো, প্লাস্টিক পণ্য – ভ্যাট ১৫%, ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, জুসার, রাইস কুকার ইত্যাদি – ভ্যাট অব্যাহতির পরিমাণ কমানো, বিদেশি চকলেট – শুল্কায়ন মূল্য ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার, এলপিজি সিলিন্ডার – ভ্যাট সুবিধার মেয়াদ হ্রাস, লিপস্টিক ও প্রসাধনী – শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি, ব্লেড – উৎপাদনে ভ্যাট ৫% থেকে ৭.৫%,
দাম কমতে পারে দেশে উৎপাদিত টায়ার, বাস ও মাইক্রোবাস – শুল্ক ও কাঁচামালের শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব, বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী ও কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি – আমদানি শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব, অনলাইন কেনাকাটায় ব্যয় বৃদ্ধি, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে বিক্রির ওপর ভ্যাট ৫% থেকে বাড়িয়ে ১৫% প্রস্তাব, এতে অনলাইন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা।
এই বাজেটকে বর্তমান সরকার সংকোচনমূলক বাজেট হিসেবে দেখছে। রাজস্ব ঘাটতি এবং সুদের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজেটের আকার হ্রাস করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
এবার সংসদ না থাকায় বাজেট আলোচনা কিংবা বিতর্কের সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে অনুমোদনের পর এটি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করা হবে।
