নতুন নোটের জন্য দ্বিগুণ দাম দিচ্ছেন মানুষ!


ঈদ উপলক্ষে বাজারে নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঘোষিত তফসিলি ব্যাংকগুলোতে এসব নোট সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ খোলাবাজারে মিলছে নতুন নোট। আর খোলাবাজারে এসব নোট বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।
সোমবার (২ জুন) থেকে সীমিত পরিসরে বাজারে নতুন নোট ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, শুরুতে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকে সরবরাহ করা হলেও ঈদের ছুটির পর জেলা শহরগুলোতেও মিলবে এসব নোট।
তবে ঈদের আগে ব্যাংকে নতুন নোট না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ গ্রাহকরা। ঈদের সালামি দিতে অনেকেই বাধ্য হয়ে তাই খোলাবাজার থেকে দ্বিগুণ দামে এসব নোট কিনছেন।
সরেজমিনে রাজধানীর মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, খোলা আকাশের নিচে পসরা সাজিয়ে বসেছেন নোট ব্যবসায়ীরা, বিক্রি করছেন নতুন নোট। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন ডিজাইনের এসব নোটের চাহিদা থাকায় দামও আকাশচুম্বী।
খোলাবাজারে ২০ টাকার একটি নোট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, ৫০ টাকার নোট ৮০ টাকায় এবং ১০০০ টাকার নতুন নোট কিনতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০–৬০ টাকা।
বান্ডিল হিসাবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ২০ টাকার নোটের। প্রতি বান্ডিলে অতিরিক্ত ১,২০০ থেকে ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ টাকার বান্ডিলে অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকা।
নতুন নোটে খোলাবাজার জমজমাট হয়ে উঠলেও ব্যাংকে এসব নোটের দেখা মিলছে না। সাধারণ গ্রাহক তো দূরের কথা, ব্যাংক কর্মকর্তারাও নতুন নোট পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।
রাজধানীর একটি প্রাইভেট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, “নতুন নোট ইস্যু হওয়ার পর হাতেগোনা কিছু ব্যাংকে পাওয়া গেছে। আবার হেড অফিসে এলেও ব্যাংকের শাখাগুলোতে এখনো আসেনি।”
মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকেই ব্যাংকে এসেছেন নতুন নোটের আশায়, কিন্তু ব্যাংক থেকে নতুন নোট পেতে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। ফলে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।
এমনই একজন গ্রাহক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “বাইরে নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে, অথচ ব্যাংক বলছে পর্যাপ্ত নোট নেই। বাজারে পর্যাপ্ত নোট না এসে থাকলে খোলাবাজারে এত নতুন নোট এল কীভাবে?”
রাজধানীর গুলিস্তানেও খোলাবাজারে দেখা মিলেছে নতুন ব্যাংক নোটের।
ঈদে নতুন ডিজাইনের নোট কিনতে গুলিস্তান এসেছেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, “সবকিছুতেই সিন্ডিকেট চলছে। টাকার নোট নিয়ে এমন সিন্ডিকেট শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। ব্যাংকে নতুন নোট না পেয়ে বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে।”
তবে খোলাবাজারের ব্যবসায়ীরা কীভাবে নতুন ডিজাইনের এত নোট পেলেন—এমন প্রশ্নে কেউ শুরুতে মুখ খুলতে চাননি।
পরে মতিঝিলের এক নোট ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নতুন নোট ব্যাংক থেকেই আসে। বিশেষ করে মতিঝিল ও গুলিস্তানের সরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। তারাই এই নতুন ডিজাইনের নোট সরবরাহ করেন।”
ব্যাংক কর্মকর্তারা কতটা লাভ করেন—এমন প্রশ্নে ওই ব্যবসায়ী বলেন, “দুই দিন আগে ২০ টাকার একটি বান্ডিল ৯০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে কিনেছি। এখন ৫০০–৬০০ টাকা লাভে বিক্রি করছি। ৫০ টাকার বান্ডিলেও একই অবস্থা।”
গুলিস্তানের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “সরাসরি কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা নোট বিক্রি করেন না। তারা মধ্যবর্তী একটি চক্রের কাছে নোট বিক্রি করেন। সেই চক্র গুলিস্তান-মতিঝিলে আরও চড়া দামে নতুন নোট বিক্রি করে।”
খোলাবাজারে নতুন নোট বিক্রি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে খোলাবাজারে নতুন নোট যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কিন্তু কোনো গ্রাহক যদি টাকা তুলে সেটি খোলাবাজারে বিক্রি করে, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের করার কিছু নেই।”
অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্মকর্তারাই এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ হোসেন বলেন, “ব্যাংকের কেউ জড়িত থাকলে দয়া করে তাদের তথ্য দিন। গভর্নরের সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়েও আমিই নতুন নোট পাইনি, অথচ ব্যাংকের সামনেই বাড়তি দামে নোট বিক্রি হচ্ছে, এটি দুঃখজনক।”
গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, “আপনারা বাড়তি দাম দিয়ে নতুন নোট কিনবেন না। গ্রাহক নোট না কিনলে এই সিন্ডিকেট এমনিতেই ভেঙে পড়বে।”
দৈএনকে/জে .আ
