শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

শীর্ষ সন্ত্রাসী আসলাম গাজীর হুকুমে গর্ভবতী নারী ফরজানার হত্যা

শীর্ষ সন্ত্রাসী আসলাম গাজীর হুকুমে গর্ভবতী নারী ফরজানার হত্যা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

এক সন্তানের জননী ফরজানা হত্যায় আসলাম গাজীর নাম। পল্লবীসহ মিরপুর অঞ্চলে দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসের চর্চা চালিয়ে আসা আসলাম গাজী এবার জড়িয়ে পড়েছেন এক নারকীয় হত্যাকাণ্ডে। অভিযোগ উঠেছে, তার নির্দেশেই সাভার থেকে গর্ভবতী ও এক সন্তানের জননী ফরজানাকে অপহরণ করে এনে পল্লবীর বাউনিয়াবাদ এলাকার একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। সেখানেই দু’দিন ধরে চলতে থাকে পাশবিক নির্যাতন যার পরিণতিতে ফরজানার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরজানা নামের ওই নারী আগে থেকেই গর্ভবতী ছিলেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে আনা হয় এবং আসলাম গাজীর নির্দেশে তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা তার ওপর নির্যাতন চালায়। ঘটনা সংঘটনের দুই দিন পর তার মরদেহ উদ্ধার হয়। বিষয়টি জানাজানি হতেই পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।

নিহত ফরজানার পরিবারের পক্ষ থেকে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এবং একটি সংঘবদ্ধ মহল তদবির চালাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে থাকা কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্য এই মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আসলাম গাজী বহু বছর ধরেই বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, জমি দখল, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং খুনের অভিযোগ। ফরজানার হত্যাকাণ্ড তার অপরাধচক্রের আরও একটি ভয়াবহ চেহারা প্রকাশ করেছে।
জনমতের দাবি এই ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং আসলাম গাজীর মতো সন্ত্রাসীদের আর কোনো প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় থেকে পার পেতে না দেওয়া হয়।


এই ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ফরজানার হত্যাকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য: ঢাকা উত্তরাঞ্চলের মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত নাম আসলাম গাজী। পল্লবীর চাঞ্চল্যকর রফিক হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আসলেও মামলাতে তার নাম না আসায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে। দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চলে দখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে সে। স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় সে গড়ে তুলেছে একটি অপরাধ সাম্রাজ্য।


আসলাম গাজীর উত্থান শুরু হয় নব্বই দশকের শেষ দিকে। তখন সে ছিল একজন স্থানীয় মাস্তান, মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনের কয়েকটি পকেট এলাকায় চাঁদাবাজি করত। অল্প সময়ের মধ্যেই সে সংগঠিত করে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। গ্যাংটির প্রধান কাজ ছিল জমি দখল, ভবন নির্মাণে চাঁদা আদায়, এবং প্রতিপক্ষকে হুমকি দেওয়া।

সূত্র মতে, আসলাম গাজী বর্তমানে একাধিক বাণিজ্যিক ভবনের মালিক হলেও, তার অধিকাংশ সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করা। কোনো ব্যক্তি যদি জমি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চায়, তাদেরকে বাধ্য করা হয় চাঁদা দিতে অথবা সরাসরি তাকে বিক্রি করতে হয় আসলাম গাজীর নিয়ন্ত্রণে থাকা দালালদের কাছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আসলাম গাজী বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকেছে। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও, বেশিরভাগ সময়েই আইনের আওতায় আনা যায়নি। পুলিশি অভিযান হলেও তার অবস্থান আগেই ফাঁস হয়ে যায়, যা প্রমাণ করে প্রশাসনের ভেতরে তার শক্তিশালী নেটওয়ার্ক।


একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আসলাম গাজী শুধু চাঁদাবাজি নয়, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত। তার গ্যাং নিয়মিতভাবে পল্লবী ও মিরপুর এলাকায় মাদক সরবরাহ করে। এলাকাবাসী ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের আশঙ্কায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।


দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার পল্লবী ও আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী এবং নাগরিক সমাজ আসলাম গাজীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। তারা চান, শীর্ষ সন্ত্রাসী আসলাম গাজীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন