শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের নামাজ আদায়


কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে সম্পন্ন হয়েছে ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত এ জামাতে অংশ নেন লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।
বিগত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও ঈদের আগের দিন সূর্যের উঁকি মুসল্লিদের মাঝে স্বস্তি এনে দেয়। বৃষ্টির কারণে মাঠ কিছুটা কর্দমাক্ত হলেও উৎসবের উচ্ছ্বাসে তা কেউ গ্রাহ্য করেননি।
ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ। দীর্ঘ ১৫ বছর পর তিনি পুনরায় জামাত পরিচালনার সুযোগ পেয়ে নিজেও আবেগাপ্লুত হন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
নামাজ নির্বিঘ্ন করতে শহরের প্রতিটি প্রবেশপথ, অলিগলি ও মাঠজুড়ে গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তার বলয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মাঠে অবস্থান নেয় সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ঈদগাহে প্রবেশের সময় মুসল্লিদের আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর ও তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পাঁচটি আর্চওয়ে, সিসিটিভি, ওয়াচটাওয়ার, মেডিক্যাল টিম, ফায়ার সার্ভিস এবং স্কাউট সদস্যদের সমন্বয়ে নেওয়া হয় সর্বোচ্চ সতর্কতা।
ঈদ জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা ভোর থেকেই রওনা হন শোলাকিয়ার পথে। কেউ আসেন গাড়ি বা ইজিবাইকে, কেউবা সাইকেলে কিংবা পায়ে হেঁটে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধায় রেল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে দুটি বিশেষ ট্রেনও পরিচালনা করা হয়।
নারীদের জন্য শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক জামাতের আয়োজন করা হয়, যেখানে বহু নারী মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজেম উদ্দীন।
ঈদুল আজহার কোরবানির প্রস্তুতির কারণে জামাতে কিছুটা কম মুসল্লির উপস্থিতি থাকলেও, পূর্বের মতো এবারও লাখো মানুষের সমাগম ঘটে ঈদগাহে। শহরের বিভিন্ন মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোড়ন, টাঙানো হয় রঙিন পতাকা ও ব্যানার, যা পরিবেশকে আরও উৎসবমুখর করে তোলে।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন। সেখান থেকেই ‘সোয়া লাখিয়া’ নামের উৎপত্তি, যা পরে রূপ নেয় ‘শোলাকিয়া’তে। সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে এ মাঠ, যেখানে প্রতিবছর ঈদে লাখো মুসল্লির ঢল নামে।
এন কে/বিএইচ
