শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

এবারও চামড়ার বাজারে ধস: ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো

এবারও চামড়ার বাজারে ধস: ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের চামড়ার বাজারে আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা ও ধস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগেই গরু ও ছাগলের কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও, মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি। বরং আগের বছরের মতোই এবারও চামড়া বিক্রিতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কোরবানিদাতারা।

নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কমে কেনাবেচা: চলতি বছর ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, চামড়া কেনাবেচা হয়েছে তার চেয়েও অনেক কম দামে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গরুর চামড়া কেনাবেচা হয়েছে মাত্র ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায়। ছোট গরুর চামড়া অনেক ক্ষেত্রেই কেউ নিতে চায়নি, আর নিলেও দিয়েছে মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা। ছাগলের চামড়া ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলেও জানা গেছে। ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলোর দরিদ্র শিক্ষার্থীরা, যারা বছরের পর বছর এই চামড়া বিক্রির টাকায় শিক্ষা ও খাদ্য ব্যয় চালিয়ে থাকেন।

মৌসুমি ব্যবসায়ী বনাম আড়তদার: পাল্টাপাল্টি অভিযোগ: চামড়ার দাম নিয়ে শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কোরবানিদাতারা বলছেন, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামের ধার ধারছেন না। অন্যদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদা নেই, আড়তদাররা কম দামেই চামড়া নিচ্ছেন।

সাভার ও হেমায়েতপুরের আড়তগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরুর চামড়া মানভেদে প্রতি পিস ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আড়ত মালিকদের সংগঠন জানিয়েছে, তারা সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনলে লোকসান গুনতে হবে।

ব্যবসায়ীদের লাভ সীমিত, ব্যয় বাড়ছে: বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, “প্রতি বর্গফুটে দাম কিছুটা বাড়ানো হলেও, বাস্তব খরচ বিবেচনায় লাভের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।”

একটি গরুর চামড়া ৭০০ টাকায় কিনে লবণ ও শ্রমিক খরচ বাবদ লাগে ৩০০ টাকা। পরে হাতবদলের খরচ যুক্ত হয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১,১৫০ টাকা। অথচ এই চামড়া ট্যানারির কাছে কত দামে বিক্রি হবে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা টিকবে কিনা- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ক্ষোভ: বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “বছরের একটি বড় উৎসবেই আমরা কিছু আর্থিক সহায়তা পাই। কিন্তু এবারো চামড়ার টাকা না পেয়ে শিক্ষার্থীদের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।”

চামড়ার বাজারে বারবারের এই ধস এবং বিশৃঙ্খলা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির নয়, সামাজিকভাবেও উদ্বেগজনক। সরকারের নির্ধারিত দামের বাস্তবায়ন নিশ্চিতে কার্যকর মনিটরিং, সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা এবং চামড়া শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বচ্ছতা ও সমন্বয় এখন সময়ের দাবি।


এন কে/বিএইচ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন