বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির অভিযোগ

সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ১৯ জন বর্তমান ও সাবেক নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। দলটির দাবি, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

রোববার (২২ জুন) দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরিত একটি আবেদন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে জমা দেওয়া হয়। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ বিষয়ক সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে আবেদনপত্র হস্তান্তর করে।

প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান, ইকবাল হোসেন, শরিফুল ইসলাম এবং নাঈম হাসান। দলটি জানিয়েছে, অচিরেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোট পরিচালনাকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে বিএনপি। মামলার আবেদনের কপি নিয়ে একটি প্রতিনিধিদল প্রথমে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। এরপর তারা শেরেবাংলা নগর থানায় মামলার আবেদন করতে যান বিএনপির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান।

তিনি বলেন, বিতর্কিত এই তিন নির্বাচনকে ঘিরে বারবার অভিযোগ করার পরও তৎকালীন সিইসি ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা আশা করি বর্তমান নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। আমরা বিএনপির মহাসচিবের এ সংক্রান্ত চিঠি জমা দিয়েছি। যেহেতু নির্বাচন ভবন আগারগাঁও এলাকায়,  সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।

সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের পর বিএনপির সালাহ উদ্দিন খান বলেন, এখানে আমরা সিইসি ও ইসি সচিব ছিলেন। আমরা তাদের কাছে অভিযোগ জমা দিলাম। আমরা জানি বর্তমান কমিশন এ অভিযোগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তারা (আগের কমিশন) যেহেতু সংবিধান লঙ্ঘন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, এজন্যে তাদের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা থানায় এজহার করা হবে।

তিনি জানান, তিন সিইসি, নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ এ মামলায় শেখ হাসিনাকেও রাখা হয়েছে। এখন অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী আশ্বাস দিয়েছেন, জানতে চাইলে এ বিএনপি নেতা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের বলেছেন—এখন কপি রিসিভ করেছেন, যা পারেন আইনি ব্যবস্থা নেবেন। সিইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা নিরপেক্ষ। আমরা আপনাদেরও নয়, কারো পক্ষে নয়। আমরা নিরপেক্ষ, যে আইনি ব্যবস্থা সেটাই নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিইসি, ইসি ও সচিবদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মামলার পদক্ষেপ এলো।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান। সেই সংসদকে ‘বিনা ভোটের সংসদ’ আখ্যা দিয়ে ভোট বর্জন করা বিএনপি।

কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ, সাবেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোবারক, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাবেদ আলী এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে। অধিকাংশ ভোট আগের রাতে হয়ে যাওয়ার অভিযোগের মধ্যে বিরোধীরা মাত্র সাতটি আসনে জয় পায়। সে নির্বাচনের নাম হয় ‘নীশিরাতের নির্বাচন’।

কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন এ কমিশনের সদস্য ছিলেন সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখাতে শরিক ও বিরোধীদল জাতীয় পার্টির জন্য আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীদের। এ নির্বাচনের নাম হয় ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন এ কমিশনে চার নির্বাচন কমিশনার ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান। 

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। সবশেষ গত ১৬ জুন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে সরকারপ্রধানের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া ‘বিতর্কিত’ তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন