রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • অপরিবর্তিত জ্বালানি তেলের দাম কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার নারীকে নিরাপত্তা ও চিকিৎসা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল কর্মস্থলে ফিরুন, নয়তো ব্যবস্থা: এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের বার্তা ৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বাতিল প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ না থাকলে আসামিকে মুক্তি দিতে পারবে আদালত: আইন উপদেষ্টা ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ ও ৫ আগস্ট ‘গণঅভ্যুত্থান দিবস’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ বিএনপি: রিজভী এনবিআরে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে শাটডাউন, স্থবির কার্যক্রম
  • সাইনবোর্ডের আড়ালে প্রতারণা: শ্রীপুরে জেদ্দা হাউজিংয়ের লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা

    সাইনবোর্ডের আড়ালে প্রতারণা: শ্রীপুরে জেদ্দা হাউজিংয়ের লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    গাজীপুরের শ্রীপুরে অনুমোদনহীনভাবে আবাসন ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোটি টাকার প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে ‘জেদ্দা হাউজিং কোম্পানি লিমিটেড’ নামের একটি হাউজিং প্রতিষ্ঠান। ‘৩ কাঠা প্লট মাত্র ২০ হাজার টাকায়’, ‘প্রতি কাঠা ৬ লাখ’, ‘৫০% ডাউন পেমেন্টে সাফ কাবলা রেজিস্ট্রেশন’, ‘১৫% ছাড়’—এমন আকর্ষণীয় অফারে প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলছে কোম্পানিটি।

    স্থানীয় ভুক্তভোগী আব্দুস সাত্তার মোল্লা এলাকাবাসীর পক্ষে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেদ্দা হাউজিং কোম্পানি নামক প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জমি বায়না ও পাওয়ার দলিলের মাধ্যমে মালিকানা দেখিয়ে প্রায় ৯০০ বিঘা জমি বিক্রির নামে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব ছাড়াও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশাল বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে গ্রাহক আকর্ষণের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা।

    কিন্তু প্রশাসনিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির নামে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের তিন ধাপের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসনের দায়মুক্তি সনদ কিংবা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। তবুও কোম্পানিটি আইন ও নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষিজমির উপর বালু ফেলে এবং লে-আউট দেখিয়ে দেদারসে প্লট বিক্রি করছে।

    বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কোনো হাউজিং কোম্পানি পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ একর জমির মালিকানা থাকতে হয়। অথচ জেদ্দা হাউজিংয়ের নামে এমনকি ১০ শতাংশ জমিরও মালিকানা নেই। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় জমির মালিকদের জমির আশপাশে কিছু অংশ বায়না নিয়ে পুরো এলাকাকে নিজেদের প্রকল্প দাবি করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।

    স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, “আমাদের জমির সামনে-পেছনে সামান্য কিছু জমি বায়না নিয়ে বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রতারণা করছে এই কোম্পানি। আমাদের এই জমি ধান উৎপাদনের একমাত্র উৎস। আমরা এগুলো বিক্রি করিনি, করবও না।”

    প্লট দেখতে এসে প্রতারণার শিকার এক সম্ভাব্য ক্রেতা মোতাহার মিয়া বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম পুরো এলাকাই কোম্পানির, কারণ এমনভাবেই আমাদের দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে ৯০০ বিঘা জমি আছে, গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আরও জমি কেনা হবে।”

    প্রতিষ্ঠানের একাধিক প্রচারণায় দেখা যায়, তারা ডুপ্লেক্স, ট্রিপ্লেক্স, ভিলা ও কন্ডোমিনিয়ামের বুকিং নিচ্ছে, অথচ প্রকল্পের নামে কোনো বৈধ অনুমোদন বা মালিকানা নেই। কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে হাফেজ আশরাফুল ইসলাম ও পরিচালক হিসেবে তার ছোট বোন আসমা আক্তারের নাম প্রচার করা হলেও প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের কোনো পরিচয় মেলেনি।

    এ বিষয়ে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, “ওই প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে কোনো আবেদন করেনি। পরিবেশ ছাড়পত্র নেওয়ার পূর্বে আবাসন প্রকল্প চালানো সম্পূর্ণ অবৈধ।”

    এদিকে, জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনকে একাধিকবার সরকারি নাম্বারে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ কায়সার খসরু বলেন, “সরকারি অনুমতি না নিয়ে হাউজিং প্রকল্প পরিচালনা করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

    স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতা ও দুর্বল নজরদারিতে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে। এই প্রতারণার চক্র যত দ্রুত সম্ভব ভেঙে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    আরও পড়ুন