গাজীপুরে চুরির অপবাদে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, কারখানায় ছুটি


গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে চুরির অভিযোগে এক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে কোনাবাড়ীর গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম সোমবার দুপুরে বলেন, ওই ঘটনার পর কারখানাটি দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সেটি খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
নিহত শ্রমিক হৃদয় (১৯) টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শুকতার বাইদ গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানায় মেকানিক্যাল মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
শনিবার ভোরের দিকে কারখানার ভেতর তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পরিবার মামলায় অভিযোগ করেছে। শনিবার এ নিয়ে শ্রমিকরা কারখানার সামনে ও এলাকায় বিক্ষোভ করেন। তাদের অভিযোগ, কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন করতে চেয়েছে।
শনিবার রাতে এ ঘটনায় হৃদয়ের বড় ভাই লিটন মিয়া বাদী হয়ে কোনাবাড়ী থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
রোববার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হাসান মাহমুদ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তি ওই কারখানারই শ্রমিক।
হৃদয়কে মারধরের ১ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, তাকে কারখানার একটি কক্ষের জানালার সঙ্গে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে খালি গায়ে একটি সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে হৃদয়ের মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। তার জিনসের প্যান্টেও রক্তের দাগ লেগে ছিল।
এ সময় আশপাশের কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, “এত করে পিটানো হইছে, (তারপরও) কিছুই হয় নাই, মরে নাই।”
ভিডিওর আরেকটি অংশে দেখা যায়, হৃদয়কে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় একটি কক্ষ থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করছেন কয়েকজন। তাদের মধ্যে একজনের হাতে কাঠের লাঠি ছিল। তখনো পিঠের দিকে হাত মুড়িয়ে রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিলেন হৃদয়। রশির একটি অংশ দিয়ে তার দুই পা বাঁধা ছিল। ওই অবস্থায় কয়েকজন তাকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হৃদয় ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছিলেন না।
মামলার বরাতে পুলিশ জানায়, হৃদয় ডিউটি শেষে বাসায় না ফেরায় শনিবার বিকালে তার ভাই লিটন ও মা কারখানার দিকে যান। সেখানে গিয়ে কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ দেখে জানতে পারেন, চুরির অপবাদ দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। পরে তারা লাশের সন্ধান চাইলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে আছে বলে জানানো হয়। সেখানে গিয়ে তারা মরদেহটি শনাক্ত করেন।
মামলার বাদী লিটন মিয়া বলেন, “গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার ভেতরে আমার ভাইকে ম্যালা মারধর করে হত্যা করা হইছে। পরে এটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য তার লাশ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।”
হৃদয়কে পিটিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত করার দাবি করেছেন কোনাবাড়ী থানার ওসি সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
ওই ঘটনার পর কারখানা কর্তৃপক্ষ এক নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে বলে মন্তব্য করেন ওসি।
তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে গ্রিনল্যান্ড লিমিটেড কারখানার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) কামরুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
