মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • কুবির বার্ষিক বাজেট পাশ ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতিমন্ত্রী অবৈধ পন্থায় কয়লা আমদানি করে অর্থ বিদেশে পাচার করেছে : হাবিব ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪২৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, হাসপাতালে ভর্তি নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে চীন কাজ করতে চায়: মির্জা ফখরুল একে-৪৭ নয়, উপদেষ্টার ছিল লাইসেন্সকৃত একটি অস্ত্র: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রমনা রেস্তোরাঁ দখলে নিয়ে বিএনপি নেতার ব্যবসা গাজীপুরে চুরির অপবাদে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, কারখানায় ছুটি অর্থবছরের শেষ দিনে ব্যাংকে লেনদেন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সাদা পোশাকে ব্যর্থতা, রঙিন পোশাকে প্রত্যাবর্তনের আশা মালয়েশিয়ায় আটক হওয়া বাংলাদেশিরা আইএসের সঙ্গে যুক্ত
  • রাহুল আনন্দের জন্মদিন: দেশ থেকে দূরে, সুরে ভরা নতুন জীবন

    রাহুল আনন্দের জন্মদিন: দেশ থেকে দূরে, সুরে ভরা নতুন জীবন
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘জলের গান’-এর প্রধান ভোকাল ও সংগীতশিল্পী রাহুল আনন্দ বর্তমানে প্রবাসে বসবাস করছেন। গেল বছরের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা তার বাসায় অগ্নিসংযোগ করে। সেই আগুনে পুড়ে যায় তার বহু বছরের সংগীতসাধনার স্মারক, বাদ্যযন্ত্র, বইপত্র ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। ঘটনার কিছুদিন পরই পরিবারসহ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এই গুণী শিল্পী।

    আজ ৩০ জুন, রাহুল আনন্দের জন্মদিন। তবে এবারের দিনটি কাটছে ভিনদেশে। তবুও তার অনুপস্থিতি সংগীতপ্রেমী শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে চলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন বহু ভক্ত, সহকর্মী ও শিল্পীবন্ধুরা।

    রাহুল শুধু একজন কণ্ঠশিল্পী নন—তিনি একাধারে সুরকার, যন্ত্রসংগীতশিল্পী, নাট্যকর্মী ও যন্ত্রনির্মাতা। তার তৈরি বাঁশি, দোতারা, তবলা কিংবা অভিনব বাদ্যযন্ত্রগুলো ‘জলের গান’-এর পরিবেশনায় এক বিশেষ মাত্রা যোগ করতো। তার কণ্ঠের আবেগ, মঞ্চে উপস্থিতি এবং সৃজনশীলতা বহু শ্রোতার কাছে ভীষণভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।

    দেশান্তরের পর থেকে তিনি জনসমক্ষে তেমন দেখা দেননি। কোনো লাইভ কনসার্ট বা সামাজিক প্ল্যাটফর্মেও তার সরব উপস্থিতি নেই। ফলে, ‘কেমন আছেন রাহুল?’—এমন প্রশ্ন ঘুরছে সংগীতমহল ও তার শুভানুধ্যায়ীদের মনে। অনেকেই চাইছেন, তিনি দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুন এবং আবারও সংগীতচর্চায় যুক্ত হোন।

    সংগীতাঙ্গনের একজন সিনিয়র সংগীত পরিচালক বলেন, “রাহুলের মতো শিল্পী হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু একজন কণ্ঠশিল্পী নয়, একটি দর্শন, একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ছেদ। আমরা চাই, তিনি আবার ফিরুন।”

    উল্লেখ্য, ‘জলের গান’ ব্যান্ডটি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিকল্প সংগীতজগতে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। শহর ও প্রান্তিক জীবনের গল্প, প্রকৃতি, ভালোবাসা ও মানবিকতা তাদের গানের মূল উপজীব্য।

    ঢাকা, ৩০ জুন:
    জনপ্রিয় সংগীতদল ‘জলের গান’-এর ভোকাল ও সংগঠক রাহুল আনন্দ বর্তমানে সপরিবারে অবস্থান করছেন ফ্রান্সে। আজ তার জন্মদিন। তবে এবারের দিনটি দেশের বাইরে, প্রিয়জন ও শিল্পসঙ্গীদের থেকে দূরে কাটছে। দেশ ছাড়ার পেছনে রয়েছে এক গভীর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ক্ষত—যা আজও তাড়া করে বেড়ায় এই গুণী শিল্পীকে।

    চারুকলা থেকে গান—একটি স্বপ্নযাত্রা
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র ছিলেন রাহুল আনন্দ। চিত্রকলায় পড়াশোনা করলেও মূল ঝোঁক ছিল সুর ও শিল্পকলার মেলবন্ধনে। নিজ হাতে তৈরি করতেন বাদ্যযন্ত্র। বাঁশি, দোতারা, দানতুড়ি—নিজের গড়া এই যন্ত্রগুলো দিয়েই তৈরি করতেন ভিন্নধর্মী সংগীত। অভিনয়েও ছিল তার দখল। থিয়েটার দল ‘প্রাচ্যনাট’-এর হয়ে অভিনয় করেছেন বহু মঞ্চনাটকে।

    ২০০৬ সালে তার নেতৃত্বেই যাত্রা করে ব্যান্ড ‘জলের গান’। রাহুল ও তার দল সংগীতকে কেবল বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং জীবন, প্রকৃতি ও সমাজকে উপলব্ধির এক পাথেয় হিসেবে উপস্থাপন করতেন। ব্যতিক্রমী সুর, কবিতার মতো গানের কথা এবং নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে ‘জলের গান’ হয়ে ওঠে এক অনন্য ব্যান্ড।

    ‘ভাঙ্গাবাড়ি’র আগুন এবং দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত
    ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যেই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কাছে অগ্নিসংযোগ ঘটে। সেই সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে আগুনে পুড়ে যায় রাহুল আনন্দের ধানমন্ডির বাসা—যা তিনি ভালোবেসে ডাকতেন ‘ভাঙ্গাবাড়ি’। এখানেই সৃষ্টি হয়েছে বহু গান, বসেছে সাংস্কৃতিক আড্ডা, আর গড়ে উঠেছিল এক বিকল্প শিল্প-জগত।

    সেই রাতে স্ত্রী ঊর্মিলা শুক্লা ও ছেলে তোতাকে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল রাহুলকে। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি। পরে জানা যায়, সপরিবারে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে চলে গেছেন।

    একটি সাংস্কৃতিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্রান্সে আপাতত নিরাপদেই আছেন রাহুল। তবে বাড়ি, স্মৃতি, যন্ত্র আর সৃষ্টির সবকিছু হারানোর যন্ত্রণা এখনো ভুলতে পারেননি। চেষ্টা করছেন পরিবার নিয়ে ধীরে ধীরে জীবন গুছিয়ে নেওয়ার।

    ‘জলের গান’ চলেছে, রাহুল ছাড়াই
    রাহুলের অনুপস্থিতিতেও কিছু কনসার্টে পারফর্ম করেছে ‘জলের গান’। তবে তাতে ছিলেন না রাহুল আনন্দ। ভক্তরা বলছেন, রাহুল ছাড়া ‘জলের গান’ যেন জলছাড়া গান! কারণ ব্যান্ডটির মূল রূপরেখা, দর্শন ও স্বর ছিল রাহুলের কণ্ঠে, উপস্থিতিতে ও সৃষ্টিশীলতায়।

    উল্লেখ্য, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ঢাকায় আসার সময় ঘুরে গিয়েছিলেন সেই ‘ভাঙ্গাবাড়ি’তেই। একধরনের সাংস্কৃতিক কূটনীতির সাক্ষী ছিল এই বাড়ি—যা আজ আর নেই।

    জীবনপথের গল্প
    ১৯৭৬ সালের ৩০ জুন হবিগঞ্জে নানাবাড়িতে জন্ম রাহুল আনন্দের। স্কুলজীবন কেটেছে নারায়ণগঞ্জে, কলেজজীবন সিলেটে। সেখানেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকায় এসে চারুকলায় ভর্তি হন এবং সংগীতের দিকে ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়েন।

    আজ, ৩০ জুন—জন্মদিনে তার হাজারো ভক্ত তাকে মনে করছেন, গান শুনছেন, শুভকামনা জানাচ্ছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—রাহুল কি আবারও ফিরবেন? আবার কি শোনা যাবে ‘ভাঙ্গাবাড়ি’ থেকে ভেসে আসা সেই সুর?


     


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ