বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
কাশ্মীরে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত

অনিন্দ্যর স্ত্রীর কোলে এসেছে তৃতীয় সন্তান

অনিন্দ্যর স্ত্রীর কোলে এসেছে তৃতীয় সন্তান
মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে স্ত্রী ও ছেলে–মেয়ের সঙ্গে অনিন্দ্য কৌশল, ছবি: সংগৃহীত।
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

অনেকক্ষণ রিং বাজার পর ফোন ধরলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা স্বপন কুমার নাথ। ঘরে নতুন অতিথি আসার খবর জানতে চাইলে চুপ করে ছিলেন কিছুক্ষণ। ‌‘ছেলে হয়েছে একটা,’ এটুকু বলতেই যেন ফোনের ওপারে বুক ফেটে যাচ্ছিল তাঁর।

স্বপন কুমার নাথের ছেলে অনিন্দ্য নেই ৪০ দিন হয়ে গেল। সেই যে কাশ্মীরে রওনা হলেন, আর ফিরলেন না প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল। শোকগ্রস্ত বাবা, মা, স্ত্রী কীভাবে ভুলবেন ব্যথা। সেই ব্যথা গতকাল বৃহস্পতিবার যেন আবার কান্না হয়ে ঝরল। কাল অনিন্দ্যর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার কোল আলো করে এসেছে নতুন অতিথি, তাঁদের তৃতীয় সন্তান।

রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন অনিন্দ্য কৌশল (৩৬)। গত ১১ নভেম্বর কাশ্মীরের ডাল লেকে হাউসবোটে অগ্নিদুর্ঘটনায় অনিন্দ্যসহ তিনজন মারা যান। অপর দুজন হলেন খাগড়াছড়ি গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমন দাশ গুপ্ত (৩৪) ও ঠিকাদার মাইনুদ্দিন (৪৫)। তিনজনই ভারত ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ৩ নভেম্বর দেশ ছেড়েছিলেন। নিয়তি তাঁদের আর ফিরতে দেয়নি।

অনিন্দ্য কৌশল রেখে গিয়েছিলেন তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা ও দুই সন্তানকে। তাঁরা প্রিয়মুখটির জন্য পথ চেয়েছিলেন। বাবা অনেক খেলনা আনবেন, ছোট্ট মেয়ে স্পৃহা সে অপেক্ষায় ছিল। অপেক্ষা আর ফুরায় না তার। স্পৃহার ছোট ভাই আরাধ্যর বয়স ১৫ মাস। সে এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি।

গতকাল রাতে নগরের অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অনিন্দ্য–প্রিয়াঙ্কার ছেলেটির জন্ম হয়। নতুনের আগমন পরিবারে সদস্যদের বারবার অনিন্দ্যর কথা মনে পড়িয়ে দিয়েছে। তিনি থাকলে আজ খুশির জোয়ার বইত ঘরে, সেই অনুভবই যেন দ্বিগুণ শোক হয়ে ফিরেছে।


অনিন্দ্যর লাশের অপেক্ষায় আছেন এখনো স্বজনেরা। কাশ্মীরে নিহত তিনজনের আধপোড়া মরদেহ এখনো চিহ্নিত করা যায়নি কোনটি কার। ঢাকায় সিআইডি পুলিশের তত্ত্বাবধানে ডিএনএ টেস্টের জন্য রয়েছে তিনটি মরদেহ। তিন পরিবারের ডিএনএ নমুনা নেওয়া হয়েছে আগেই। স্বপন নাথ বলেন, এখনো ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট আসেনি। এলে মরদেহ দেওয়া হবে।

কাশ্মীরে হাউসবোটে আগুনে তিনজনের মৃত্যু পরিবারগুলোর কাছে এখনো রহস্যঘেরা। কারণ, ওই বোট থেকে যাঁরা বেঁচে গেছেন, তাঁদের গায়ে কোনো আঁচ লাগেনি। কেবল বাংলাদেশি এই তিনজনই পুড়ে গেল সেখানে। নিছক দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনো কিছু, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না তারা। এখন কেবল স্বজনদের স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছে পরিবারগুলো।

মারা যাওয়ার আগের দিন রাতে স্বামীর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার শেষ কথা হয়েছিল। শরীরের খোঁজখবর নিয়েছিলেন। আর সাবধানে থাকতে বলেছিলেন স্ত্রীকে। কিন্তু নিজেই লাশ হয়ে ফিরে আসেন দেশে।

অনিন্দ্য কৌশলের জামালখানের বাসায় অনেক পারিবারিক ছবি টাঙানো রয়েছে। স্পৃহার জন্মদিনে তোলা ছবিটিতে ছেলেকে কোলে নিয়েছেন অনিন্দ্য। পাশে স্ত্রী ও মেয়ে। পৃথিবীর আলো দেখা তৃতীয় সন্তানটির কাছে এই ছবির লোকটিই বাবা হয়ে থাকবে। রক্ত–মাংসের বাবাকে স্পর্শ করা হয়ে উঠবে না তার।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন