মিঠাপুকুরে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ, টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা!


রংপুরের মিঠাপুকুরে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখার অভিযোগ ওঠার পরই রাতে ওই শিশুটির পরিবার রহস্যজনক কারনে বলছে তাদের শিশু ধর্ষন হয়নি বরং ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন দুসন্তানের জনক মুসা মিয়া (৫৫)। শিশুটি রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও রহস্যজনক কারনে পরিবার এখনো থানায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ কিংবা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করেননি।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল আনুমানিক চারটার সময় মিঠাপুকুর উপজেলার ০৩ নং পায়রাবন্দ ইউনিয়নের শালমারা বাজার সংলগ্ন বজলার রহমানের বাড়িতে তাঁর ছেলে অভিযুক্ত মুসা মিয়া এ ঘটনা ঘটান।
স্থানীয়রা জানান, সাত বছরের শিশুটি গৃহস্থালি কাজের জন্য ব্যবহৃত ধারকৃত খুন্তি ফেরত দিতে যায় প্রতিবেশী বজলার রহমানের বাড়িতে।দীর্ঘসময় শিশুটি ফেরত না আসায় তার মা শিশুর খোঁজে মুসা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় শিশুটি মেঝেতে পড়ে রয়েছে। তখন বাচ্চার মা চিৎকার দিয়ে বলেন আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে ওই বজলার রহমানের ছেলে মুসা।পরে অসুস্থ্য অবস্থায় শিশুটিকে প্রথমে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
যেখানে ঘটনার দিন বিকালে শিশুটির পরিবার শিশু ধর্ষণের মতো গুরুত্বর অভিযোগ তুলে স্থানীয়দের কাছে আইনি সহযোগিতা চান। সেখানে রাতে অজ্ঞাত কারণে পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
হাসপাতালে অবস্থানরত শিশুর পিতা জানান, আমি গরীব মানুষ। কেস করে কি করবো। মুসা মিয়ার জমিতে আমার ছোট ভাই ১০/১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে খামার নির্মাণ করছে। সেই খামারে আমি কাজ করে খাই। এখন যদি মামলা করি ওরাঁ বের করি দিবে। তখন আমি কি করে খাবো। আমার ছোট ভাই সহ মিজান আছে। তারা যা করার করবে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
অভিযুক্ত মুসা মিয়ার ভাই রায়হান কবির জানান, এটা আমাদের বিরোধী গ্রুপের ষড়যন্ত্র।আমার ভাইয়ের নাতনির বয়সি এই শিশু। শিশুটি হয়তো ভয় পেয়েছিলো। ওই শিশু নিয়মিত আমাদের বাসায় যাতায়াত করে। ওরা নিয়মিত খুন্তি, কুড়াল, কোদাল সব আমাদের বাসা থেকে নিয়েই কাজ করে। সেদিন ও শিশুটি খুন্তি ফেরত দিতে আসছিলো। তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় ধর্ষণের শিকার শিশুটি হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেণ্টারে ভর্তি রয়েছে। এ বিষয়ে শিশুর পরিবারের কেউ কথা বলতে নারাজ। মেডিকেলে অবস্থানরত শিশুর চাচার বন্ধু মিজান জানান,ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। শিশুটি প্রচন্ড ভয় পেয়েছিলো। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ধর্ষিত শিশুর পরিবারের নিকটাত্মীয় জানায়, বাচ্চাটিকে ধর্ষণ না হলে কেন ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেণ্টারে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বিষয়টি সমাধান হয়েছে। শিশুর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। আর্থিক ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডাঃ আঃ মঃ আখতারুজ্জামান জানান, আমি গতকাল ছিলাম না। এবিষয়ে আমার জানা নেই। পরিচালক স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। শিশুটির শারীরিক অবস্থা জানতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ ইউনুস আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মিঠাপুকুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম।ভিকটিমের পরিবারকে মামলা করার জন্য বলা হয়েছে।কিন্তু তারা অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। ধর্ষিত না হলেও শিশুটিকে ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলেই মামলা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বিট পুলিশ এস আই সাইয়ুম হোসেন জানান, এমন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে ধর্ষণ না হলেও ধর্ষণের চেষ্ঠার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে তারা কেন যে অভিযোগ করছে না তা বুঝতে পারছি না।
