শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

রূপগঞ্জে বাড়ছে তালাক

রূপগঞ্জে বাড়ছে তালাক
সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

রূপগঞ্জে বিয়েবিচ্ছেদের সংখ্যা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী স্ত্রীকে পাঠাচ্ছেন তালাকের নোটিশ। প্রতিদিন ভাঙছে ২ টি বৈবাহিক সম্পর্ক। মাসে গড়ে ৫০ টি। আর গত ৫ বছরে এ উপজেলায় ২৬ তালাকের ঘটনা ঘটেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি স্বামীর অমনোযোগ, স্বামী কতৃক নির্যাতন, পরনারী আসক্তি, স্বামীর মাদকাসক্তি, স্বামীর বেকারত্ব এবং স্ত্রীর ভরণ-পোষণে অনীহা। ফলে এটা স্পষ্টতই অনুভব করা যায় যে, যেসব মেয়ে তাদের স্বামীদের তালাক দিয়েছে তার  অনেকাংশেই স্বামীর নির্যাতন থেকে প্রতিকার পেতেই তালাকের আশ্রয় নিয়েছে।          

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ বছরে রূপগঞ্জে ৩ হাজার তালাকের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কায়েতপাড়া ইউনিয়নে ২৬১ টি, মুড়াপাড়া ইউনিয়নে ২৮০টি, রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ২৭০ টি, ভুলতা ইউনিয়নে ১০২ টি, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নে ৩২২ টি, ভোলাবো ইউনিয়নে ২৪২ টি, দাউদপুর ইউনিয়নে ৩৩৪ টি, কাঞ্চন পৌরসভায় ২৯৭ টি ও তারাবো পৌরসভায় ৪৯৬ টি তালাকের ঘটনা ঘটেছে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, বহু ক্ষেত্রেই তালাক দেওয়াতে মেয়েদের বাধ্য করা হয়। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন পুরুষ তালাক দিলে দেনমোহর, খোরপোষ দিতে হয়, মেয়ে তালাক দিলে তা দিতে হয় না। তাই সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও ছেলে তালাক দেয় না। ফলে মেয়েটি বাধ্য হয়েই তালাক দেয়। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বর্তমান সমাজে যৌতুক আর তালাক যেনো একসূত্রে গাথা। যৌতুকলোভী একশ্রেণীর স্বামী যৌতুকের জন্যই বিয়ে করে। তারা বিয়ের পর প্রতিশ্রুত যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালায়। চাপ প্রয়োগ করে স্ত্রীর পিতার ওপর। এ নির্যাতন শেষ পর্যন্ত তালাকের পর্যায়ে গড়ায়। দারিদ্র কণ্টকিত সমাজে অনেক বেকার যৌতুকের বিয়েকে নেয় এক ধরণের পেশা হিসাবে। যৌতুকের লোভেই তারা বিয়ে করে বারবার। আর তার ফলশ্রুতিতে তালাকের প্রক্রিয়াও চলে বারবার। 

কাজী শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন কাজী বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, মাদকাসক্তের প্রভাব, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরস্পরকে ছাড় না দেওয়ার মনোভাব, মেয়ের মা কিংবা ছেলের মা-বোন ঘর ভাঙার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এছাড়া ন্যায়বিচার পাওয়ার অনিশ্চয়তায় নারীরা তালাকের রাস্তা বেছে নেন। উপজেলা নারীনেত্রী শিক্ষানবীশ আইনজীবি রায়হানা সুলতানা কণা বলেন, নানা অপবাদ, নির্যাতন সইতে না পেরেই মেয়েরা পুরুষদের তালাক দেয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েরা কোন বিচার পায় না। মামলা চালাতে গেলেও তাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। এসব ঝুট-ঝামেলা থেকে রেহাই পেতেই মেয়েরা তালাক দেয়। আর এ কারণেই মেয়েরা তালাকে এগিয়ে। 

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, কালচারালি আমাদের দেশে ডিভোর্সটাকে ভালো চোখে দেখা হয় না। মেয়ে পক্ষ চায় না ডিভোর্স হউক। এ দেশের মেয়েরা স্বামীর ঘরকে অনেক বড় করে দেখে। যখন নানা নির্যাতন সহ্য করতে হয় তখন তালাকের পথ বেছে নেয়। বর্তমানে মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে গার্মেন্ট সেক্টর থেকে শুরু করে কর্পোরেট অফিস ও এনজিও পর্যন্ত। মেয়েদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা বাড়ছে বলে তালাকের সিদ্ধান্তে তারা ভাইটাল রোল পালন করতে পারছে। 

কাঞ্চন সলিমউদ্দিন চৌধুরি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মলিনা সূত্রধর বলেন, বর্তমানে সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন আচরণেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। মানুষের সহিষুতার অভাব ও বিদেশী সিরিয়ালের অনুকরণকে তিনি ডিভোর্সের অন্যতম কারণ বলে মনে করনে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন রকম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো মানুষকে যেমন কাছে এনেছে তেমনি আবার দূরেও ঠেলে দিয়েছে। এসবের অতি আধুনিকায়নের কারণে মানুষ তার পরিজন থেকে ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছে। বিদেশী সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ও চর্চা করতে গিয়ে মানুষের জীবন দিন দিন হয়ে পড়ছে বিপর্যস্ত। তাই পরবর্তীতে তারা ডিভোর্স নামক কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে। 


রায়হানা/সুলতানা/রূপগঞ্জ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন