একটি বেগুনের ওজন এক কেজি!


দূর থেকে দেখে মনে হবে লাউ, কিন্তু কাছে গেলেই ভুল ভাঙে। মাঝারি আকারের লাউয়ের মতো সবজিটি অতি পরিচিত বেগুন। এ জাতের নাম বারি-১২, যার একটি বেগুনের ওজন এক কেজির উপরে। আকারে লাউয়ের মত বড় বলে এলাকার লোকজন একে ‘লাউ বেগুন’ নাম দিয়েছে।
গৌরীপুরে প্রথমবারের মতো বারি-১২ জাতের বেগুন চাষ করেছেন আব্দুল জলিল রিপন নামে এক কৃষক। পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে এরই মধ্যে সফলতা পেয়েছেন তিনি। নিজের খেত থেকে বেগুন তুলছিলেন কৃষক রিপন। কয়েকটি বেগুনেই ভরে যাচ্ছিল একটি ঝুড়ি। কারণ, একেকটি বেগুনের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১কেজি। বেগুনের আকার এত বড় হবে কল্পনাও করতে পারেনি সে। প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন রিপন।
উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রাম গ্রামের কৃষক রিপন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সহায়তায় গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশে জমিতে আবাদ করেন বারি-১২ জাতের বেগুন।
আব্দুল জলিল রিপন জানান, আমি এই জাতের বারি বেগুন-১২ প্রথম চাষ করেছি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বীজ, সারসহ সকল খরচ দিয়েছে। দেশী বেগুন যেভাবে চাষ করা হয় ঠিক একই রকম পরিচর্যা করতে হয়। এই ফসলটা ফলনে হয় বেশী তাই লাভজনক। খাইতে ভালো, বাজারে চাহিদা বেশী।
দেশি জাতের উচ্চফলনশীল এই বেগুন চাষে কষ্ট কম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি বলে জানান তিনি। চারা রোপণ থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত ভালো ফলন পেতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা কৃষক রিপনকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে গেছেন। ডিসেম্বর মাস থেকেই জমি থেকে বেগুন উত্তোলন করে বাজারজাত শুরু করে কৃষক রিপন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম বলেন, বারি বেগুন -১২, যা ‘লাউ বেগুন’ নামে সারা বাংলাদেশে সমাদৃত; আমরা গৌরীপুর উপজেলায় ৩টা প্লটে প্রদর্শনী হিসেবে দিয়েছিলাম, আমরা খুব সাড়া পেয়েছি কৃষকের। আমরা এখানে সার, কীটনাশক ও বীজ দিয়েছি। কৃষকরা চাষ করেছে। এখানে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কৃষক রিপন এই পর্যন্ত ২৫/৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছে, আরো ২৫/৩০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবে।
রিপন বলেন, ‘জমি থেকে ১কেজি পর্যন্ত ওজনের বেগুন পেয়েছি। এখনও কয়েকটি আছে বীজের জন্য। এগুলোর ওজন আরও বেশি হতে পারে।’ বেগুন ও বেগুনের মাঠ দেখতে এবং বেগুন কিনতে অনেকেই আসছেন রিপনের খেতে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর গৌরীপুরে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি প্লটে ১ একর জমিতে বারি-১২ বেগুন চাষ করা হয়েছে। ফলন বেশী, লাভও বেশী, রোগবালাই কম, সেচ দিতে হয় কম তাই কৃষকের মাঝে এই বেগুন চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস বলেন, বারি-১২ বেগুন এবারই প্রথম গৌরীপুরে চাষ হয়েছে। ফলন দেখে কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাঁরা এটার চাষ পদ্ধতি এবং বীজ কোথায় পাওয়া যায় জানতে অফিসে আসতেছে। এটা হাইব্রিড বেগুন নয়, এটা উপসী বেগুন। এটা থেকে কৃষক নিজেই বীজ রাখতে পারবে।
ময়মনসিংহ/গৌরীপুর/
