স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও মেলেনি গণপরিবহন


শিল্পাঞ্চলখ্যাত রূপগঞ্জের দশ লাখ বাসিন্দার চলাচলের জন্য কোনো গণপরিবহন বা বাস-মিনিবাস নেই। আছে অনুমোদিত ও অননুমোদিত অসম গতির নানা কিসিমের যানবাহন। রাজধানীর খুব কাছের উপজেলা রূপগঞ্জ। তা সত্ত্বেও ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সঙ্গে সরাসরি কোনো গণপরিবহন নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন দশায় চরম দুর্ভোগে এ উপজেলায় কর্মরত ও অবস্থানরত কর্মজীবী মানুষ। উপজেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক আছে, আছে ব্রিজ-কালভার্টও। তবে স্বাধীনতার ৫৪ বছর ধরে এ উপজেলায় নেই কোনো পাবলিক বাসের চলাচল। মানুষ আধুনিকায়নের সাথে নিজেদের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর চেষ্টা করলেও এখানে যাত্রীবাহী বাসের চাকা ঘোরে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৩৬০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক দখল করে চলে ভটভটি, নসিমন, অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত রিকশাভ্যান। বাস চলাচল না করায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এসব অবৈধ যানবাহনেই চলাচল করতে হচ্ছে প্রায় দশ লাখ মানুষকে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, এমনকি প্রাণহানিও। উপজেলায় অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। ইজিবাইকের সংখ্যা সাত হাজারের ওপর। যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।
প্যাডেলটানা রিকশাকে পেছনে হটিয়ে দিচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। ব্যাটারিচালিত রিকশাকে টেক্কা দিচ্ছে ইজিবাইক। যত্রতত্র থামছে বাহনগুলো, নামছে যাত্রীরা। ফলে দুর্ঘটনার শঙ্কাও থাকছে।
উপজেলাজুড়ে রাস্তাঘাটগুলো বেহাল, কোথাও খোয়া ওঠা, কোথাও খানাখন্দে ভরা। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, রাস্তার পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বাস-মিনিবাস না থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও চাকরিজীবীরা। সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুড়াপাড়া বিশ^বিদ্যালয় কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও তাঁদের জন্য নেই কোনো বাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, গণপরিবহন থাকলে শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হতো। তাদের অনেক কষ্ট করে আসা-যাওয়া করতে হয়।
সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। রাজধানী ও জেলা শহরের সাথে সরাসরি গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে চলে নানা অজুহাতে যাত্রী হয়রানি বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন বলেন, রূপগঞ্জে লোকসংখ্যা বেড়েছে। অতএব বাস সার্ভিস হওয়া জরুরি। তবে তার আগে রাস্তাঘাটগুলো ঠিকঠাক করতে হবে।
রাজধানীর সাথে সরাসরি কোনো বাস সেবা চালু করতে পারেনি। রূপগঞ্জ থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোন কালেই কোনো গণপরিবহন চালু ছিল না। যে কারণে জেলামুখী কর্মজীবী যাত্রী সাধারণকে ভেঙে ভেঙে অথবা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিজার্ভ নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। এতে যাত্রীদের সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে।
নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল বাশার রুবেল বলেন, তিনি জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। তাদের ভেঙ্গে ভেঙ্গে অটো-সিএনজিতে করে নারায়ণগঞ্জে যেতে হয়। ভাড়াও বেশি গুণতে হয়। একই কথা বলেন একই আদালতে কর্মরত অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম রতন।
খলিলুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের উপজেলায় বাস চলাচল না করাটা লজ্জাজনক। যে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ, সে এলাকা উন্নত বলাটা কতটুকু যৌক্তিক।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার তাজাল্লি ইসলাম বলেন, রূপগঞ্জের মতো একটি শিল্প ও ভিআইপি এলাকায় গণপরিবহন নেই এটা কি ভাবা যায়? এখানে অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি রয়েছেন। তারা ব্যক্তি উদ্যোগে গণপরিবহণ নামাতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, এই উপজেলায় যাত্রীবাহী বাস চালু করতে হলে স্থানীয় উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
রূপগঞ্জ/রায়হানা/সুলতানা
