শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

রূপগঞ্জে বন কেটে বসতি!

রূপগঞ্জে বন কেটে বসতি!
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদি মৌজার বনবিভাগের ৭০ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে প্রভাবশালীরা বসতি নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বনবিভাগের সৌন্দর্যমন্ডিত প্রাকৃতিক টিলার মাটি পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে ঐসব দখলদাররা। এরাই দিনের আলোতে ইছার মাথার (ট্রাক্টর) কাছে বনবিভাগের টিলার মাটি আর রাতের আধারে স্থানীয় করাতকলের কাছে গজারী গাছসহ বিভিন্ন ফলদ গাছ পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছে। গত ওয়ান ইলেভেনের সময় বনবিভাগের জায়গা থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু কোর্টে মামলা থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা গজারী বনকে রক্ষা করার দাবীতে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি পেশ করছেন। উপজেলা প্রশাসন বনবিভাগ দখল নিয়ে তদন্ত করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিল করেছেন। তবে দখলদাররা দাবী করে বলেছেন, সিএস পর্চামূলে তারাই মালিক। এসএ ও আরএসে মালিক বনবিভাগ। যখন সরকার রায় পাবে তখন তারা বনবিভাগের জমি ছেড়ে দিবে।     
               
অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার দুর্গম এলাকা হিসাবে পরিচিত দাউদপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদি মৌজার এসএ ও আরএস পর্চামূলে ২নং খতিয়ানের ২১ দাগে ৭০ বিঘা জমি বনবিভাগের। এ বনবিভাগের পুরো এলাকায় ছিল হাজার হাজার গজারী গাছ। গজারী গাছ ছাড়াও শাল,আম, জাম, নারিকেল, কাঠালসহ অন্যান্য ফলদ ও ঔষধি গাছও ছিল। ছিল কয়েক’শ সোন্দর্যমন্ডিত প্রাকৃতিক টিলা। নির্বিবাদে গাছপালা আর নির্বিচারে মাটি কেটে গড়ে তোলা হয়েছে বসতি। ৯০’র দশকের পর স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর বনবিভাগের এসব জমির উপড় লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠতে থাকে বসতি।  সবমিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৫২ জন প্রভাবশালী বনবিভাগের জায়গা দখল করে বাড়ীঘর নির্মাণ করে। 

সরজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাউদপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের কুলিয়াদি এলাকার  ফজলু হক সিকদার, মহর আলী, সেরাজুল মিয়া, গেসু মিয়া, মান্নান মিয়া, ফিরোজ খান, সিরাজ ভূইয়া, আব্দুর রেজাক, আজগর হোসেন, সামসুল হক, আজহারুল ইসলাম, আয়নাল হক, মজিবুর রহমান, ইমরান মিয়া, অলিউল্লা মিয়া, জাফরউল্লা মিয়া, দ্বীন ইসলাম, হুমায়ুন মিয়া, হাকিমউদ্দিন, অখিলউদ্দিন, নাসিরউদ্দিন, বজরআলী, নুর আমিন মিয়া, সেলিনা বেগম, মালেকা বেগম, মোশারফ হোসেন, আতাবর মিয়া, জুয়েল মিয়া, ইমরান মিয়াসহ আরো অনেকে বন বিভাগের জায়গা দখল করে বসতি নির্মাণ করেছে। বন বিভাগের গাছপালা স্থানীয় করাত কলের কাছে পানির দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।


কথা হয় দখলদার বজর আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার জায়গায় আমি বাড়ি বানাইছি। জায়গাটিতো বনবিভাগের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বনবিভাগের অইলেতো স্যারেরা আমাগো কিছু কইতোই। স্যারেতো এহানে আয়ে, আমাগোতো কিছু কয়না। কথা হয় অভিযুক্ত ফজলুল হক সিকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি অনেক আগে থেইক্যা দহলে আছি। ভোগদহল কইরা খাইতাছি। বনবিভাগের জায়গা দখল করেছেন কি হিসাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূর্বপুরুষের আমলে এইসব জায়গা জোতে আছিলো। অহন এসএ ও আরএসে বনবিভাগের অইছে। বনবিভাগের হেরাতো অহনও দহল পায় নাই। মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, টিলা আছিল, হেইডার মাডি কাইটা বেইচ্চা হোমান করছি। তিনি ৩৯ শতাংশ জায়গা দখল করেছেন। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) তারিকুল আলম বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে অবগত নই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু এটা বনবিভাগের জায়গা। সেহেতু দখলদাররা যতই প্রভাবশালী হউক তাদের উচ্ছেদ করা হবে।


নতুন/কাগজ/সুলতানা/রূপগঞ্জ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন