মোবাইল হারানোর ঘটনায় নজিরবিহীন জিডি


রূপগঞ্জ থানায় মোবাইল হারানো জিডির পাহাড় জমেছে। গত এক বছরে ১৩৫০ মোবাইল হারানোর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসেই ২০০ মোবাইল চুরির ঘটনায় জিডি হয়েছে। তবে থানায় হারানোর ঘটনা দেখিয়ে জিডি করা হলেও মূলত চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনায় অধিকাংশ মোবাইল খোয়া গেছে বলে জানা গেছে।
তারাব চত্বর, রূপসী চত্বর, পূর্বাচল উপশহর এলাকা, ভুলতা-গোলাকান্দাইল চত্বরে মোবাইল চুরির সংখ্যা বেশি ঘটছে বলে জানা গেছে। এসব মোবাইল চুরির ঘটনায় ৫ সংঘবদ্ধ চক্রের শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। পুলিশের তদারকি না থাকার ফলে রূপগঞ্জে মোবাইল চুরির ঘটনা অহরহ ঘটছে। দিনকে দিন বেড়ে চলছে মোবাইল চুরির ঘটনা। হারানো সংক্রান্ত যে কোন জিডি ফৌজদারি কার্যবিধি আইনে আমলযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হলেও এ সংক্রান্ত জিডি অনুসন্ধান অথবা তদন্তে রূপগঞ্জ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের তেমন কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে পুলিশ বলছে মোবাইল হারানোর ঘটনায় সিডিআরসহ নানা জটিলতা থাকার কারণে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা অনীহা প্রকাশ করেন।
রূপগঞ্জ থানা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, রূপগঞ্জে মোবাইল চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। গত এক বছরে ১৩৫০ মতো মোবাইল চুরি ও হারানোর ঘটনায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারী মাসে রূপগঞ্জ থানায় মোবাইল হারানোর ঘটনায় প্রায় ২০০টি সাধারণ ডায়েরি জমা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে চুরি যাওয়া এসব মোবাইল ফোনের দু’য়েকটি উদ্ধার হলেও বেশিরভাগই পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোবাইল চুরির ৫ সংঘবদ্ধ চক্রের ১১২ সদস্য রূপগঞ্জে সক্রিয় রয়েছে। এদের মধ্যে দুটি গ্রুপ ভুলতা-গোলাকান্দাইল এলাকার। অপরটি চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রের। আরেকটি বাহির এলাকা থেকে এসে চলে যায়। প্রত্যেক গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ জনের সদস্য রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংঘবদ্ধ চোরের দলের এক সদস্য বলেন, তাদের প্রধান টার্গেট বাজার, মার্কেট ও যানবাহন। একজনকে তারা টার্গেট করেন। সুযোগ বুঝে পকেট থেকে মোবাইল হাতিয়ে নেন। অনেক সময় সুযোগ বুঝে ছিনিয়ে নেন। তিনি আরো বলেন, প্রায় ১১২ জনের সদস্য রূপগঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এসব মোবাইল বিক্রি করার জন্য রয়েছে আলাদা ক্রেতা। একটা মোবাইল ফোন তিনটি হাত বদল হয়। ফলে সহজে খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নেই। আর মোবাইল ফোনটি নেওয়ার পর সাথে সাথে আইএমআই নাম্বার পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
মোবাইল চুরি যাওয়া এমন কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের মোবাইলগুলো সাধারণত চুরি কিংবা ছিনতাই হয়। কিন্তু পুলিশের পরামর্শেই জিডি করতে হয়। মামলা নেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ তেমন আগ্রহ দেখায় না। পুলিশের বক্তব্য জিডি করলে আইএমআর ট্রেস করে মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
রূপগঞ্জ থানার দায়েরকৃত বেশ কয়েকটি সাধারণ ডায়েরী খুঁজে দেখা যায়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী আউখাব এলাকার কামাল মিয়া স্থানীয় কাঁচাবাজারে গেলে তার ব্যবহৃত রেলমি সি-১১ মডেলের মোবাইল ফোনটি কোথাও পড়ে যায়। কামাল মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তার মোবাইল ফোনটি মূলত চুরি হয়েছে। কিন্তু থানায় যাওয়ার পর পুলিশ মামলার পরিবর্তে জিডি করতে বলে। তাই জিডি করা। গত ১৫ জানুয়ারী মুড়াপাড়া হাউলীপাড়া এলাকার শাহবাজ মোল্লার ভিভো ভি-১৫ মডেলের মোবাইলটি পথিমধ্যে হারিয়ে যায়। পরে রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী করে। গত ১৪ জানুয়ারী ভুলতা সিংলাব এলাকার হারুনুর রশিদ তার ব্যবহৃত রেলমি ৭ মডেলের মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলে। বরপা এলাকার শিহাব। গতবছরের ১২ জুন তারিখে তার ব্যবহৃত স্যামসাং গ্যালাক্সি এম-২ মোবাইল ফোনটি হারিয়ে ফেলে। পরে রূপগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। গতবছরের ৩ নভেম্বর নরসিংদীর গাবতলী থেকে পূর্বাচলে ঘুরতে আসেন শফিকুল ইসলাম। পূর্বাচল বাণিজ্য মেলার ভবনের সামনে তার স্যামসাং গ্যালাক্সি এ-৫০ মোবাইলটি হারিয়ে যায়। প্রায় ২০ টি সাধারণ ডায়েরী খতিয়ে দেখা গেছে, সবার মোবাইল হাটা-চলার সময় অজ্ঞাতসারে হারিয়ে গেছে।
রূপগঞ্জ থানার সামনে কম্পিউটারে কাজ করেন নাঈম মিয়া। তিনি বলেন, মোবাইল চুরি যাওয়ার ঘটনায় অহরহ জিডি হচ্ছে। এখন বাসাবাড়ি থেকেও মোবাইল অহরহ চুরি হচ্ছে। এবারের ঈদেও অনেক মোবাইল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপগঞ্জ থানার এক উপপরিদর্শক বলেন, রূপগঞ্জ থানায় হারানো সংক্রান্ত জিডি হচ্ছে প্রতিনিয়তই। এই রূপগঞ্জে চুরি হওয়া,ছিনতাইকৃত অথবা হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন কেনার অনেক সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা এসব চোরাই মোবাইলের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর পরিবর্তন করে ফেলে। এরপর সেগুলো আবার বিক্রি করে থাকে। এতে করে হারিয়ে যাওয়া অনেক মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কারণ আইএমইআই নম্বর কার্যকর থাকে না।
ঐ উপপরিদর্শক আরো বলেন, একটি মোবাইল ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) বের করতে হলে কম্পিউটার অপারেটরকে টাকা দিতে হয়। নয়তো তারা কাজ করে না। আবার কোনও কোনও ফোনের একাধিক সিডিআর বের করতে হয়। যতবার সিডিআর বের করতে হয়,ততবারই তারা টাকা চায়। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে তো টাকা চাওয়া যায় না। ফলে নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করেই মোবাইলের সিডিআর তুলতে হয়। তাই পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোন হারানো সংক্রান্ত জিডি তদন্ত করতে আগ্রহ কম দেখান।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম লিয়াকত আলী বলেন, আসলে মোবাইল তিনভাবে খোয়া যায়। প্রথমত কানে লাগিয়ে কথা বলার সময় টান দিয়ে নিয়ে যায়। দ্বিতীয়ত পকেট থেকে নিয়ে যায়। তৃতীয়ত মোবাইল ব্যবহারকারী ভুলবশত ফেলে রেখে যায়। তবুও দেখি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তবে ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হতে হবে।
নতুন/কাগজ/সুলতানা/রূপগঞ্জ
