শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকদের ভিড়:

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটক মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ডের দিকে ছুটে এসেছেন।

বড়লেখা উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও চা বাগান অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। সারা বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। তবে বড় কোনো উৎসব বা ছুটির সময় তো আর আলাদা কথা! এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি পর্যটকদের আরো বেশি আকৃষ্ট করেছে।


এবারের ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় নজরকাড়া। এর ফলে এই এলাকায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, ইজারাদারসহ সকলের মুখে খুশির হাসি ফিরেছে।

সরেজমিনে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কাঁঠালতলি বাজার থেকে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পর্যটনকেন্দ্রের সড়কটি ছিল পূর্ণসময়ে ব্যস্ত। বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, পিকআপ ভ্যান ও মোটরসাইকেলে চড়ে পর্যটকরা আনন্দে মেতে মাধবকুণ্ডের দিকে ছুটে চলছিলেন। জলপ্রপাতের প্রবেশ ফটকের সামনের টিকিট কাউন্টারে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় ছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের দোকান ও খাবার হোটেলগুলিতেও পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে।

পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতের দিকে এগোতে গিয়ে দেখা গেল, জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের বিশাল ভিড়। হইহুল্লোড়ে মেতে উঠেছেন তারা। কেউ কেউ জলপ্রপাতের ঝরনার পানিতে স্নান করছেন, আবার কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে ছবি তুলছেন। জলপ্রপাতের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে অনেকেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। স্থানীয় আলোকচিত্রীরাও পর্যটকদের ছবি তুলতে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন।

ঢাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা জাহিদ হাসান বলেন, "এটি আমার প্রথম মাধবকুণ্ড ভ্রমণ। এখানে এসে সত্যিই অভিভূত। এখানকার পরিবেশ অসাধারণ। সিলেট এবং মৌলভীবাজার অঞ্চলের পর্যটন কেন্দ্রগুলি অন্য এলাকার তুলনায় অনেক সুন্দর। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের জন্য সিলেট ও মৌলভীবাজারের এসব স্থান অবশ্যই দেখতে হবে। একই সঙ্গে, যদি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তবে পর্যটন খাত থেকে প্রচুর রাজস্ব আসবে।"

এদিকে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ আশেপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও পর্যটকরা মাধবকুণ্ডে আসতে দেখা গেছে। তবে মানসম্মত আবাসিক হোটেলের অভাবে পর্যটকদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ম্যানেজার সাজু আহমদ জানান, সকাল ১০টা থেকেই পর্যটকরা মাধবকুণ্ডে আসতে শুরু করেন এবং প্রতিদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে তাদের আগমনও বৃদ্ধি পায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত দুই হাজারের বেশি পর্যটক মাধবকুণ্ডে প্রবেশ করেন। তিনি আরও বলেন, "এবারের ছুটি এখনও চলছে, তাই আশা করা যাচ্ছে যে পর্যটকদের সংখ্যা আরও বাড়বে।" ব্যাপক পর্যটকের আগমনে মাধবকুণ্ডের ব্যবসায়ীদের মুখেও খুশির হাসি ফুটে উঠেছে।

মাধবকুণ্ড পর্যটন পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল কুদ্দুস জানান, ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে মাধবকুণ্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যটন পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে এখানে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই স্থানীয় এবং দূরের পর্যটকরা নিরাপদে এবং আনন্দের সাথে তাদের সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ঈদের দীর্ঘ ছুটির সময় পর্যটকের আগমন বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনাকে সামনে রেখে পর্যটন পুলিশ মাধবকুণ্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করেছে।

বনবিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, "পর্যটকেরা এখানে কোনো ধরনের অসুবিধা ছাড়াই মাধবকুণ্ডে আনন্দ উপভোগ করছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যটন পুলিশ তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি বনবিভাগ ও ইজারাদার পক্ষের লোকজনও সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।"


নতুন/কাগজ/তিমির/মৌলভীবাজার
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন