শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণিল “ফাগুয়া উৎসব”


মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট ইউনিয়নের ফুলছড়া চা বাগানের খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হলো চা শ্রমিকদের অংশগ্রহণে বর্ণিল “ফাগুয়া উৎসব।
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে আয়োজিত এ উৎসবের মধ্য দিয়ে দেশের চা শ্রমিকদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্য নতুনভাবে তুলে ধরা হয়।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন ও ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই উৎসবে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন চা শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক প্রতিনিধিরা।
উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন খ্যাতিমান নির্মাতা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, যিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, “চা শ্রমিকদের অবদান আমাদের জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব।”
জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন, থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম, ফিনলে টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার মো. সালাউদ্দীন, উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক প্রীতম দাশ, চা শ্রমিক নেতা পরিমল সিং বাড়াইক এবং চা শ্রমিক প্রতিনিধি রত্মা তাঁতী।
সন্ধ্যায় শুরু হয় উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্ব। চা শ্রমিকদের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ছিল ভোজপুরী গুরুবন্দনা ও হোলি গান, বাড়াইক সম্প্রদায়ের ঝুমুর নৃত্য, গড় সম্প্রদায়ের হোলি সংগীত, উড়িষ্যা সম্প্রদায়ের হাড়ি নৃত্য, পত্র সওরা ও চড়াইয়া নৃত্য, মাহাতো (কুর্মী) সম্প্রদায়ের ঝুমুর নৃত্য এবং তেলেগু সম্প্রদায়ের ডাল ও কাঠি নৃত্য—যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
উৎসব সম্পর্কে আয়োজক প্রীতম দাশ বলেন, “দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে যারা চা শিল্পে কাজ করছেন, তাদের হারিয়ে যেতে বসা সংস্কৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। দেশের প্রায় সব চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন জানান, “আমরা একটি সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেছি, যার অংশ হিসেবে ‘ফাগুয়া উৎসব’ উদযাপিত হয়েছে। জানুয়ারিতে হারমনি ফেস্টিভালের আয়োজন করা হয়েছিল, এবং এ ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “বাগানভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবকে বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সম্মান ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত। এ আয়োজনে সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
নতুন/কাগজ/তিমির/মৌলভীবাজার
