কেরানীগঞ্জে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, আতঙ্কে এলাকাবাসী


কেরানীগঞ্জ উপজেলায় একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাজনৈতিক পরিচয় ও সাংবাদিকতার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে চাঁদাবাজি করছে। এই সিন্ডিকেটের প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে ভূমি অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিআরটিএ, গ্যাস অফিস থেকে শুরু করে বাজার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান—কোনো জায়গাই বাদ যাচ্ছে না।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এই চক্রের সদস্যরা কখনো নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে, আবার কখনো বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সাথে ছবি তুলে নিজেদের পরিচয় পাল্টে ফেলে। তাদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, দখলবাজি, এবং জাল দলিল তৈরির মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
চক্রের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন—মজিবর রহমান, শেখ শামীম, আব্দুল গনি ও শামসুল ইসলাম ওরফে সনেট। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা সময় জালিয়াতি, প্রতারণা ও দখলসংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ। কেউ কেউ আবার সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের অনেকে অতীতে রাজনৈতিক সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, আবার কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে ছিলেন মামলার ভয়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে জমি দখলের সাথে জড়িত। কেউ কেউ বেসরকারি টেলিভিশনের কার্ড ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছেন। এমনকি প্রভাবশালী পরিচয় ব্যবহার করে তারা বহুতল ভবনও নির্মাণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কেরানীগঞ্জের রতনের খামার এলাকার বাসিন্দা সানি আহমেদ অভিযোগ করেন, "আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে আমাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় আবারও হুমকি আসে। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।"
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনকে বারবার জানালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এই চক্রটি কখনো নিজেকে সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ, আবার কখনো বিরোধী দলের সমর্থক হিসেবে দাবি করে, ফলে প্রশাসনও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।
কেরানীগঞ্জের সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন—এ ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।
